ঠাকুরগাঁওয়ের মন্দিরে ১১ বার জারি ১৪৪ ধারা
১২ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:০৭
ঠাকুরগাঁও: সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামে শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দির এলাকায় দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি গ্রুপ সনাতন ধর্মালম্বী এবং ইস্কন মতাদর্শ লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হওয়ার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এ নিয়ে ১১ বার জারি করা হলো ১৪৪ ধারা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় এ জারির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন এ আদেশ জারি করেন। যা ৭ অক্টোবর ভোর ৬টা হতে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বলবত থাকবে।
আদেশে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামে শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে দূর্গা পুজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। মন্দিরের নামে থাকা অধিক পরিমান জমি-জমা ভোগদখলকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি গ্রুপ, সনাতন ধর্মালম্বী এবং ইস্কন মতাদর্শ লোকজনের মধ্যে দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে এই বিরোধ চলে আসছে।
আদেশে আরও জানা যায়, মন্দীরে সম্পত্তি নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মারামারিসহ খুনের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি মামলাও চলমান রয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে সাংঘর্ষিক সম্পর্ক বিরাজ করার কারণে ৭ অক্টোবর ভোর ৬টা হতে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির আদেশ প্রদান করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরের নামে ২টি মৌজায় মোট ৫২ একর দেবত্তোর জমি রয়েছে। এই জমির মালিকানা নিয়ে মন্দিরের সেবাইত ফুলেন চন্দ্র সরকারের সঙ্গে এলাকার কিছু লোকজনের বিরোধ চলছিল।
১৯৯৩ সালে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সেই বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে ইস্কনের লোকজন ওই জমির মালিকানা দাবি করে আকস্মিকভাবে মন্দিরে অবস্থান নেয়। এই নিয়ে ২০০৯ সালে সেখানে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ইস্কনের লোকজনের সংষর্ষ হয়। এতে ফুলবাবু নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় ইস্কনের লোকজনের নামে হত্যা মামলা করা হয়। এ নিয়েই দুই পক্ষের বিরোধ চলতে থাকে এবং প্রতি বছর দূর্গা পূজার সময় এই দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। বার বার এ বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন।
একটি সূত্র অনুযায়ী, বিষয়টি এতোদিনে মিমাংসা হয়ে যেত তবে সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের স্ত্রী কেন্দ্রীয় ইস্কনের একজন সদস্য। রমেশ চন্দ্র সেন ক্ষমতায় থাকায় তিনি ইস্কনের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। ফলে বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, নির্বাচনের সময় রমেশ চন্দ্র সেন এখান থেকে অনেক টাকাও নিতেন। শুধু রমেশ চন্দ্র সেনই নয়, ঠাকুরগাঁওয়ের হিন্দু নেতাসহ অনেকেই বিভিন্নভাবে এখান থেকে সুবিধা ভোগ করতেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই মন্দিরের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ আছে। এবার এই পূজা শেষে আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি যে, দুই পক্ষের রেকর্ডপত্র ও অন্যান্য বিষয়াদি যাচাই করে আমরা এই সমস্যাটির একটি পার্মানেন্ট সলিউশনের ব্যাপারে উদ্যেগ নিবো।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউআর