Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সব আগের মতোই আছে, মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৯

ঢাকা: ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ‘সব আগের মতোই আছে, মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই’— এমনটিই মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘দুর্যোগ প্রশমন বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে ‘প্রচার দল’। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রচার দলের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।।

বিজ্ঞাপন

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগের সকল মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই (অন্তর্বর্তী সরকার) বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল, এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন আপনাদের বিবেচনায় আসছে না?’

তিনি বলেন, ‘আপনার (অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যাথী হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এ কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে; কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।’

তিনি বলেন, ‘মান্না দে‘র একটি গান, তুমি কি সেই আগের মতোই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ..। এরকম ‍যদি বলি, সরকার বদলে গেছে, তুমি-আমি একই আছি, আগে যা ছিলাম। মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই। সব আগের মতোই আছে।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নাই। মানুষের অধিকারের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তান হারা হয়েছে, যারা পিতৃহারা হয়েছে, যারা মা হারা হয়েছে, যারা সব হারিয়েছে, তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় নাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এখনো নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন নাই। কিন্তু, জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনো উইদআউট নির্বাচন কমিশন সেখানে আমি কীভাবে বিশ্বাস করব আপনি নির্বাচন করবেন, কীভাবে বিশ্বাস করব?’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কমিশনের পর কমিশন। আরেকটা কমিশন হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, জাস্ট টাইম কিলিং, নাথিং মোর। নির্বাচন যত শিগগির হবে, জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের মধ্যে হবে।’

তিনি বলেন, ‘১/১১ যে বিরাজনীতিকরণ বা রাজনীতিবিদদের অপসারণ করা বা রাজনীতি অঙ্গন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া বা সংস্কারের নামে কুসংস্কার— এগুলো এখনও আমাদের স্মৃতিতে ঘুরছে। আজ ১৬ বছর পর জনগণের একটাই দাবি- সুষ্ঠু নির্বাচন। জাস্ট আপনি একটা নির্বাচন করে দিয়ে চলে যাবেন। অন্য কোনো দাবি নাই।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের (ছাত্রদের) আলাদা করতে চায় কেন? ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেন, কিছু বলার থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সর্তক করবে।’

‘আন্দোলন শেষ, আমরা তো চলে গেছি, আমাদের কেউ ডাকে নাই। ১৯৬২ সালে আমি ক্লাস এইটের ছাত্র। তখন থেকে শিক্ষা আন্দোলন ছিলাম, তখন থেকে রাজনীতি করছি। আমি বলব, ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার মাসুল কে দেবে?’— বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু রিফর্ম দরকার হয় সেইটুকু রিফর্ম করবেন। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। এসব সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী দিনে যখন জনগনের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, তখন তারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার করবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা বলছি, আপনারা যদি ব্যর্থ হন জাতি ব্যর্থ হবে, আপনারা ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হওয়া। আমরা দেখতে চাই, আপনারা সফল হন। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি, সহযোগিতা দেবো। এখন আপনারা স্পষ্ট করেন, নির্বাচন কবে করবেন।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে, বলেন না কেন? সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন ১৮ মাস, তার কথা বলেছেন, বলুক। পরেরদিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সরকারের কথা না। তাহলে সরকারের কথাটা কী? ৩৬ মাস, ৩০ মাস- তাই বলেন না। বলতে তো হবে আপনাকে। আপনাকে তো সময় বলতে হবে। কোনো বিয়ে ঠিক হলে তিন মাস আগে তারিখ ঠিক হয়। আমি যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন; আমাদের তো কাজ আছে, আমাকে জনগণের কাছে যেতে হবে।’

জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হক প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর