চিকিৎসক থেকে কনট্রাক্ট কিলার
৭ জুন ২০১৮ ১৮:০৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: চিকিৎসক জাহিদুর রহমান। ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্লিনিকে চাকরি করলেও সরকারি চাকরির চেষ্টা করেননি। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের শখ ছিল তার। বিচিত্র এই শখ থেকেই পরবর্তীতে অস্ত্র বিক্রেতা ও কনট্রাক্ট কিলার হয়ে ওঠেন এ ডাক্তার।
বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিসিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। গতকাল রাতে ময়মনসিংহের বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে সিটিটিসির দল।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ মে যাত্রাবাড়ি থেকে দুইটি পিস্তলসহ গ্রেফতার করা হয় ডাক্তার জাহিদুরকে। দুই দফা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সবকিছু তার স্ত্রী জানে বলে জানান তিনি। এরপর গত ৩ জুন তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে গাবতলী থেকে ১টি পিস্তলসহ গ্রেফতার করা হয়। তারপর তাদেরকে মুখোমুখি রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৭ জুন ভোরে তাদের ময়মনসিংহের বাসা থেকে আরো ১২ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল ৩টি, ৩০৩ রাইফেল ১টি, পয়েন্ট ৩২ বোর রিভালবার ৪টি, পয়েন্ট ২২ রিভালবার ১টি, ৭.৬৫ পিস্তল ৫টি, পয়েন্ট ২৫ পিস্তল ১ টি এবং ১ হাজার ৬২২ রাউন্ড গুলি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লন্ডন থেকে একজনের সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের এক সংসদ সদস্যকে খুনের চুক্তি হয়েছিল ডাক্তার জাহিদুরের। লন্ডনের কোন ব্যক্তির সঙ্গে কোন সংসদ সদস্যকে খুনের চুক্তি হয়েছিল বিষয়টি এখনো জানা যায়নি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, জাহিদুর ২০০২ সালে ডাক্তারি পাস করলেও কোন স্থায়ী চাকরিতে যোগদান করেননি। এরপর ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডিপ্লোমা করেন। মাঝখানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন ক্লিনিকে অল্প কিছুদিন করে চাকরি করেন। তার হাতের নিশানা খুবই নিখুঁত ছিল এবং যেহেতু কনট্রাক্ট কিলিংয়ে প্রচুর অর্থ পাওয়া যায়। সে সুবাদে পর্যায়ক্রমে কন্ট্রাক্ট কিলার হয়ে ওঠে এবং বেশকিছু কিলিংয়ে সে অংশ নিয়েছিল।
তার সবগুলো অস্ত্রই বৈধ ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। কিছু অস্ত্র কেনার পর সে নিজে মোডিফাই করেছে। যেসব ডিলারের কাছ থেকে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের নাম আমাদের কাছে এসেছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেসব ডিলারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, কতটা কিলিংয়ে অংশ নিয়েছিল এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০০৩-০৪ সাল থেকে তিনি এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র ব্যবসার সুবাদে বিভিন্ন এলাকার দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল।
যে অস্ত্র বিক্রি করে তার কাছে সকল অপরাধীই সমান। কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে ডা. জাহিদুর অস্ত্র সহায়তা দিয়ছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/একে