ফুটপাতের ঢাকনা উধাও, চলাচলে ঝুঁকি
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০২
রাজশাহী: রাজশাহী নগরীতে লোহার তৈরি ড্রেনের ঢাকনা চুরির প্রবণতা বেড়েছে। নগরীর সিটিহাট-তেরখাদিয়া সড়কের প্রায় পাঁচ শ ঢাকনা চুরি গেছে। সপুরাসহ কিছু এলাকায় অনেক ঢাকনা বসানোই হয়নি। এ অবস্থায় চলতি পথে তৈরি হয়েছে বড় ঝুঁকি। রাতের অন্ধকারে ঘটছে দুর্ঘটনাও। পথচারীদের চলতে হচ্ছে সব ঝুঁকি মাথায় নিয়েই।
দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত মেরামতের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে এসব এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। শিগগিরই এগুলোতে আবার ঢাকনা বসানো হবে।
শিলিন্দা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় মুদি দোকানদার আবদুস সোবহান দুই মাস আগে চলতি পথে ড্রেনে পড়ে যান। সড়কের ওই স্থানের ঢাকনাটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। ড্রেনে পড়ে গেলে সোবহানের ডান পা ভেঙে যায়। এক মাসের বেশি সময় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছে তাকে। সোবহান বলেন, রাতের বেলা দোকান বন্ধ করে যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এখানকার প্রায় সব স্ল্যাবই চুরি হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বয়সে তরুণ মাদকসেবীরা ঢাকনা চুরির কাজ করে থাকেন। তারা এখানকার স্ল্যাব চুরি করে ভাঙারির দোকানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এ কাজ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরাও পরেছেন কয়েকজন।
স্থানীয় দোকানদার সেলিনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, আমি এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা বিক্রি করি। সন্ধ্যার পর অথবা ভোরের দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে তারা স্ল্যাব চুরি করছে। এদের বয়সও একদম কম। মাঝেমধ্যে দুয়েকজন ধরাও পড়েছে। ছাড়া পেয়ে আবার চুরি করছে।
তেরখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা বলেন, এই রাস্তায় যান কম চলাচলের কারণে প্রায় মানুষ হাঁটাহাঁটি করে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ডায়াবেটিস রোগীরা হাঁটাহাঁটি করেন। অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এখানে পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়াতে হবে। না হলে এমন চুরি ঘটতেই থাকবে।
আতিকুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সিটি করপোরেশন লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে সুন্দর ফুটপাতটি নির্মাণ করেছিল। লোহার ফ্রেমের লোভে চোর এখন স্ল্যাবগুলো তুলে নষ্ট করছে। ফুটপাত না থাকলেও রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা যেত। কিন্তু এত সুন্দর ফুটপাত এখন হাঁটার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
এর মধ্যে গত সোমবার সকালে চুরি হওয়া স্ল্যাব ও ফ্রেমসহ দুই তরুণকে হাতেনাতে আটক করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই তরুণেরা রিকশায় করে ফ্রেমগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। নগরের ডাবতলা-সিটিহাট সড়কের বাঁ পাশের ফুটপাত থেকে ওগুলো তোলা হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শেখ সাকিব জানান, ফজরের নামাজ পড়ে তিনি নগরের বহরমপুর থেকে সিটিহাটের সড়কে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। এ সময় দেখেন, রিকশায় দুই তরুণ ফুটপাতের স্ল্যাবের লোহার ফ্রেম নিয়ে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ফ্রেমগুলো রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ফ্রেমগুলো নিয়ে নগরের রাজপাড়া থানায় যান সাকিব।
রাজপাড়া থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সুরভী খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের ধরা হয়েছিল তাদের মাদকাসক্ত মনে হয়েছে। নেশার টাকা জোগার করতে তারা এ কাজ করে থাকতে পারেন।’
বহরমপুর থেকে সিটিহাট পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতের প্রায় ৫০০ স্ল্যাব এরই মধ্যে তুলে ফেলা হয়েছে। এসব স্ল্যাবের চারপাশের লোহার ফ্রেমগুলোও খুলে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় একটানা ৩০টি পর্যন্ত স্ল্যাব তুলে ফেলা হয়েছে। এতে স্ল্যাববিহীন ওই ফুটপাতে হাঁটাকে বিপজ্জনক বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ড্রেনের ঢাকনা চুরির ঘটনাগুলো সম্পর্কে জেনেছি। কিছুদিন ধরে এ ঘটনা ঘটছে। আগেই থানায় জিডি করা হয়েছে। যে স্থানগুলো থেকে স্লাব চুরি হয়েছে সেগুলো আবার বসানো হবে।’
সারাবাংলা/টিআর