রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স নয়: বিটিআরসি চেয়ারম্যান
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪৭
ঢাকা: দেশের টেলিকম খাতে লাইসেন্স নবায়নে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে বলেও জানান তিনি। বিগত সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক লাইসেন্স দিয়েছে, ভবিষ্যতে তা হতে দেওয়া হবেনা বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত টেলিকম খাতের ইকো সিস্টেম পুণর্বিবেচনা নিয়ে স্টেক হোল্ডার বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের টেলিকম সেক্টরে রেফারি ছিলোনা। শুধু রেগুলেটর ছিলো। আইনে বলা হয়েছে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। লাইসেন্স প্রদান ও তরঙ্গ বরাদ্দসহ সব কিছু করবে বিটিআরসি। তবে ২০১০ সালে এসে আইনে একটি শৈল্পিক পরিবর্তন আনা হয়। সবই ঠিক থাকবে, তবে সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে। ফলে পছন্দের লোক বা পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যে কারণে আমরা সেবার মান বাড়াতে পারছিনা।’
তিনি বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে টেলিকম খাতের বেশিরভাগ লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তখন লাইসেন্স নবায়ন হবে। নবায়নের ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের পদক্ষেপ যেন আগামী এক যুগের জন্যে টেলিকম খাতে ভালো ভিত রচিত হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘মোবিলিটি নয় সংযোগ ও কানেক্টিভিটির জন্য বাংলাদেশে মোবাইল সার্ভিস চালু হয়। সংযোগ স্থাপনই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। তাই ভয়েস কল নেটওয়ার্ক ছড়াতেই অবকাঠামো স্থাপন করা হয়। কিন্তু ডাটা কানেকশন চালুর পর ভিওআইপি’র জুজুর ভয় আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এক্ষেত্রে টেলিকম বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের মতো আমরাও বুঝতে পারছি ডাটা এখন লাইফ লাইন। সেখানে আমাদের নেটওয়ার্ক টপোলজি রেখে এগিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে উঠছে। তাই এখন রিফর্ম করা জরুরি। স্টেট মনোপলি ভাঙতে গিয়ে এখন প্রাইভেট মনোপলি গড়ে উঠছে। এটার জন্য রেফারি দরকার। সেটাই বিটিআরসি করছে। বিটিআরসি স্বাধীন কমিশন হিসেবে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শক নিয়োগ করে। ২০১০ সালে একটি শৈল্পিক পরিবর্তন হয়। সেখানে সরকারি পূর্বানুমোদন যুক্ত হয় ‘
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পূর্বানুমোদন শব্দটি যুক্ত করে দিয়ে বিটিআরসিকে প্রহসনের কমিশনে পরিণত করা হয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। অতীতের ক্ষতি পুসিয়ে নিতে হবে। একইসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন পূরণে ইকো-সিস্টেম পুর্নগঠন করতে হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে অনেক লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মন্ত্রণালয় নয়, বিটিআরসি-কে স্বাধীন কমিশন হিসেবে দেখতে চান এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা (পলিটিক্যাল অ্যাফিলিয়েশন) বা ক্ষমতাপূজারী ব্যবসায়ীদের প্রতি আনুকূল্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যে বদলাতে হবে স্বৈরাচারীতা মূলক আচরণ। এছাড়াও লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ দাবি করা হয়।
অনুষ্ঠানে আইএসপি ও আইআইজি’র জন্য দাম বেধে দেয়া হলেও মোবাইল অপারেটরদের জন্য না করায় এবং লাস্ট মাইলে সিডিএন স্থাপনের বাধা থাকায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে মন্তব্য করেন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক। এ খাতে ট্যাক্স-ভ্যাট থাকায় তৃণমূলে ইন্টারনেট খরচ কমানো যাচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে কি-নোট উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. রোকনুজ্জামান। উপস্থাপনায় তিনি মার্কেট মনোপলি ভাঙার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারীর সভাপত্বিত্বে বৈঠকে টেলিকম খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও ব্যাসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাফোনের এমডি আমজাদ হোসেন খান, নভোকম এমডি হাসিবুর রহমান, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহমুদ শাহেদ, আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক, টেলিকম বিশেষজ্ঞ টিআইএম নুরুল কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এইচআই