Thursday 17 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুসে রঙিন বান্দরবানের আকাশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০১

প্রবারণা পূর্ণিমার সন্ধ্যায় আকাশে উড়ল বাহারি ফানুস। ছবি: সারাবাংলা

বান্দরবান: জাগতিক দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের আশায় রাজ্য-রাজত্ব, ভোগ-বিলাস সব ছেড়ে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সংসার পরিত্যাগ করেছিলেন রাজকুমার সিদ্ধার্থ। দীর্ঘ তপস্যায় একসময় তিনি হয়ে ওঠেন গৌতম বুদ্ধ। প্রচলিত আছে, গৌতম এই পূর্ণিমাতেই নিজের মাথার চুল উড়িয়ে দিয়েছিলেন আকাশে। সে চুল অবশ্য ফিরে আসেনি, হীরা-মানিক্যখচিত স্বর্ণপাত্রে সংরক্ষিত হয়ে স্থাপন হয় চুলামনি চৈত্য, যা দেবতাদের জন্যও পূজনীয়।

বিজ্ঞাপন

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের সন্ন্যাস গ্রহণ করায় চুল আকাশে উড়িয়ে দেওয়া তথা জাগতিক সব চিহ্ন থেকে মুক্তির প্রতীকী ঘটনা স্মরণ করেই প্রতি বছর আশ্বিনী পূর্ণিমার তিথিতে আকাশে উড়ানো হয় শত শত ফানুস। বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবই এই ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ বা প্রবারণা পূর্ণিমা।

এ বছর আয়োজন সীমিত পরিসরে হওয়ায় ফানুসের সংখ্যা ছিল কম। ছবি: সারাবাংলা

প্রতি বছর চার দিন ব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে উদ্‌যাপন করা হলেও এ বছর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় দুই দিনে ও সীমিত পরিসরে পালন করছে প্রবারণা পূর্ণিমা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) শুরু হয়েছে এই আয়োজন। শেষ হবে আগামীকাল শুক্রবার (১৮ অক্টোবর)।

সীমিত আয়োজনের মধ্যে এবারে গৌতম বুদ্ধের স্মরণে ফানুসও উড়ানো হচ্ছে সীমিত পরিসরে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই ফানুস উড়েছে আকাশে। এ সময় মারমা ভাষায় ‘সাও দো’, ‘সাও দো’ বা ‘শুভ মুক্তি’, ‘শুভ মুক্তি’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।

ফানুস ওড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারমা ভাষায় ‘সাও দো’, ‘সাও দো’ (‘শুভ মুক্তি’, ‘শুভ মুক্তি’) ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বৌদ্ধ বিহার। ছবি: সারাবাংলা

বান্দরবান প্রবারণা উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে এবার সীমিত পরিসরে উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এবার দুদিনেই সব আয়োজন শেষ করা হবে।’

মারমা সম্প্রদায় তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এই উৎসবে অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে দলবদ্ধভাবে রাতব্যাপী পিঠা তৈরি, নতুন পোশাক পড়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের পিঠা বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হাজার প্রদ্বীপ প্রজ্বালন,আকাশে ফানুস উড়ানো ও রথযাত্রা।

বিজ্ঞাপন

সীমিত আয়োজনের মধ্যেও বৌদ্ধ বিহার সাজানো হয়েছে বর্ণিল রঙে। ছবি: সারাবাংলা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বান্দরবানের বিহারে বিহারে চলছে ভিক্ষুদের উদ্দেশে অর্থ ও অন্নদান, ফুল পূজা। উপাসক-উপাসিকারা গ্রহণ করছেন অষ্টশীল ও দশশীল। বিহারে বিহারে চলছে ধর্মীয় দেশনা। জগতের সব প্রাণীর মঙ্গল কামনায় করা হচ্ছে বিশেষ প্রার্থনা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন বিহারে বিহারে উপস্থিত হয়ে সুখ-শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় জড়ো হচ্ছেন। দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধূপকাটি প্রজ্বালন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের খাবার) প্রদান করে দিনটি পালন করেন মহাআনন্দে।

প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে প্রয়াতদের আত্মার শান্তি কামনা। ছবি: সারাবাংলা

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের মূল আকর্ষণ পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে তৈরি করা মঙ্গলরথ। রথে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে ঐতিহ্যবাহী রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত আসাংম্রাইকে (গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে) বন্দনা করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। পরে সেখানে বন্দনা শেষে উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত পদমুং আসাংকে বন্দনা করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। এর পর পুনরায় পুরাতন রাজবাড়িতে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়।

শুক্রবার বিকেলে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে তৈরি করা রথের ওপর একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে রথটি পুরো শহর ঘোরানো হবে। এ সময় বৌদ্ধ ধর্মের নর-নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বুদ্ধ মূর্তিকে। রাতের এ রথযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই পাশে উপচে পড়া ভিড় জমে। শুক্রবার রাতে রথটি বড় ক্যাং থেকে উজানি পাড়া প্রদক্ষীণ করে খেয়া ঘাটে রথ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুই দিনব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমা।

সারাবাংলা/এইচআই/টিআর

প্রবারণা পূর্ণিমা বান্দরবান মারমা সম্প্রদায়

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর