‘সিনওয়ার হত্যার কঠিন বদলা নেওয়া হবে’: ইরান
১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১২:১৪
ইসরাইল হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পরে ইরানে ‘প্রতিরোধ’ জোরদার হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জাতিসংঘে ইরানের মিশন জানায়, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যাকাণ্ড এই অঞ্চলে ‘প্রতিরোধ’ জোরদার করার দিকে নিয়ে যাবে।
জাতিসংঘ থেকে এএফপি জানায়, মিশন এক্স-এর একটি পোস্টে বলেছে, ‘প্রতিরোধের চেতনাকে জেরালো করা হবে। তিনি যুবক ও শিশুদের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠবেন যারা ফিলিস্তিনের মুক্তির দিকে তার পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন দখলদারিত্ব ও আগ্রাসন থাকবে, প্রতিরোধ টিকে থাকবে। কেননা শহিদরা অমর এবং অনুপ্রেরণার উৎস।’
উল্লেখ্য, সিনওয়ার নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৮২ সালে ২০ বছর বয়সে প্রথম গ্রেফতার হন। তাকে চার মাসের প্রশাসনিক আটকাবস্থায় রাখা হয়। মুক্তির পর মাত্র এক সপ্তাহ পরে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং বিনা বিচারে ছয় মাস কারাগারে রাখা হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং আট মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
১৯৮৮ সালে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যার পাশাপাশি ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতা করার সন্দেহে চার ফিলিস্তিনিকে হত্যার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তার বিচার করা হয়। এ মামলায় তাকে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কারাবাসের সময় সিনওয়ার ইসরায়েলি কারাগারে হামাস বন্দীদের সুপ্রিম লিডারশিপ কমিটির নেতৃত্ব দেন। একের পর এক অনশন ধর্মঘটের সময় কারা কর্তৃপক্ষের সাথে সংঘর্ষ পরিচালনা করতে সহায়তা করেন। এ সময় তাকে বিভিন্ন কারাগারের স্থানান্তর করা হয়।
তিনি দুইবার কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু উভয় প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
সিনওয়ার তার কারাজীবনকে পড়া-লেখা, হিব্রু শেখা এবং রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বই রচনা ও অনুবাদ করার কাজে ব্যবহার করেন।
তিনি ২০১১ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের এক বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসাবে মুক্তি পান।
মুক্তির পর, ২০১২ সালে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের সময় সিনওয়ার হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোতে নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালে তিনি হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। রাজনৈতিক ব্যুরো ও ব্রিগেডের নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় প্রচেষ্টা।
তিনি ২০১৭ সালে গাজায় আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন এবং ২০২১ সালে তিনি আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে চার বছরের মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হন।
সিনওয়ারের বাড়িতে একাধিকবার বোমা হামলা হয়েছে। তাকে একজন সতর্ক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। খুব কমই প্রকাশ্যে কথা বলতেন তিনি।
সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবর, ২০২৪-এ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের আক্রমণের মূল হোতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
তেহরানে এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হওয়ার পর হামাস আগস্টে সিনওয়ারকে তার শীর্ষ নেতা নির্বাচন করে।
সিনওয়ার ১৯৬২ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি খান ইউনিস স্কুলে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরবি স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১১ সালে তিনি গাজা উপত্যকার এক নারীকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে।
বাসস
সারাবাংলা/এসডব্লিউআর