Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পালিয়েছে ঠিকাদার, বন্ধ খাল শোভা বর্ধনের কাজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০২

মানিকগঞ্জ: শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল খনন ও শোভা বর্ধনে কয়েক দফায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া খালের কাজ শুরু করা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। ঠিকাদার ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ রয়েছে খালের শোভা বর্ধনের কাজ।

এ ছাড়া, খাল খননে সাবেক মেয়র রমজান আলীর অনিয়ম-দুর্নীতিকেও দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমান পৌর প্রশাসক গত দুই মাসেও কাজ শুরু করতে না পারায় পৌরবাসীর মধ্যে চলছে সমালোচনা। কবে নাগাদ খালের কাজ শুরু হবে সেটাও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি নির্বাহী প্রকৌশলী।

বিজ্ঞাপন

পৌরবাসীর অভিযোগ, মানিকগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা রয়েছে। এছাড়া সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতারা এই কাজ পেয়েছে। কিন্তু তারা ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা। ফলে খাল খননের অগ্রগতি থেমে গেছে। আর শহরের আবর্জনা খালের ভেতর ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব বেড়েছে।

মানিকগঞ্জ পৌর কতৃর্পক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের খালটির খনন ও শোভা বর্ধনে ২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের প্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের মাঝামাঝি ‘সেকেন্ড সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পের অধীনে খাল খনন, দুইপাড়ে সিসি ব্লক স্থাপন, নিরাপত্তা দেয়াল (গাইড ওয়াল), দুটি পথচারী সেতু, একটি সেতু, খালের উভয়পাশে আরসিসি পাইপ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ, একটি পাবলিক শৌচাগার নির্মাণ ও হাঁটার রাস্তা (ওয়াক ওয়ে) নির্মাণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

যৌথভাবে এ প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স কামরুল অ্যান্ড ব্রাদারস। তবে মূলত মেসার্স অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করছে। এ কাজে চুক্তিমূল্য ধরা হয় ২৫ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ি, ২০২২ সালের ১০ মে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং শেষ হওয়ার সময় ছিল গত বছরের ১০ মে পর্যন্ত। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি কাজের মেয়াদও বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুটিকে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে, যা চুক্তিমূল্যের ৫১ ভাগ। প্রকল্পের মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়ানো হলেও কাজ থমকে রয়েছে এবং শেষ হয়েছে মাত্র ৬৫ ভাগ।

এর আগে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যয় হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সে সময়েও খালের উৎসমুখ খনন করা হয়নি। ফলে খনন করেও সারা বছর পানিপ্রবাহ রাখা সম্ভব হয়নি। উল্টো বর্ষা মৌসুমের পানির সঙ্গে পলি ঢুকে কিছুদিনের মধ্যে খালটি ভরাট হয়ে যায়।

অন্যদিকে নিম্নমানের কাজের কারণে কিছুদিনের মধ্যে খালের বাঁধাইকরা পারের সিসি ব্লক ধসে পড়ে। পানিপ্রবাহ না থাকায় শহরের বাসাবাড়ি, হোটেল রেস্তোরাঁর বর্জ্যে মূলত ভাগাড়ে পরিণত হয় খালটি। এবারও খালটির উৎসমুখ খনন না করে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আবার খালটি খনন ও শোভা বর্ধনের প্রকল্প হাতে নেওয়ায় সুফল পাবে এ নিয়েও শঙ্কিত পৌরবাসী।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর জানান, সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ রমজান আলীর দুর্নীতির কারণেই এই খালটি আলোর মুখ দেখছে না। খাল খনন এবং শুভবর্ধনের নামে দুই দফা কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও পৌরবাসী এর সুফল থেকে বঞ্চিত।

অন্যদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে।

এবিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, খালের কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এনজে

খাল খনন মানিকগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর