নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের
১৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৪২
ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবমুখী ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষ, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্বিসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব- আপনারা জিনিসপত্রের দাম কমাতে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাস্তবমুখী এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) আয়োজিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেডআরএফ’র ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় জেডআরএফের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. জুবাইদা রহমানও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ড.আব্দুল মঈন খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। জেডআরএফ’র নির্বাহি পরিচালক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার সংগঠনের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অর্জন বিপন্ন হবে। রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখে কোনো উপকার মিলবে না। মাফিয়া চক্র বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তবে মানুষ এখন বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মাফিয়া চক্রের কবল থেকে বঞ্চিতরা অধিকার চায়। শহিদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার অনেক প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সেটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। কখনোবা সময় সাপেক্ষ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার কাজ করলে সেটি সহজ হয়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারের আমলে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি-জায়গা, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিল। যাদের জায়গা-জমি দখল করেছে তারা দখলদারদের কবল থেকে সেগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়েছে। সেগুলো পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনই রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য সবাইকে স্বেচ্ছাসেবীর মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন আমরা প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাই। সেইসঙ্গে আমি জুলাই-আগস্টে শহিদ, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন,‘আজ স্বাধীন দেশে আমরা আছি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে। নতুন প্রজন্ম রাজনীতি বিমুখ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে ছাত্র-জনতা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়েছেন। আজ তারাই রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
ড. মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির হাল ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছিলেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে দেশের আপামর মানুষের কাছে নিয়ে যান। এই যে ত্যাগের ধারাবাহিকতা সেটি নতুন প্রজন্মকে মনে রাখা উচিত।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘জিয়াউর রহমান মাত্র চার বছরে দেশের যে পরিবর্তন এনেছিলেন পরবর্তীতে ৪০ বছরেও অন্যরা আনতে পারেননি। আজকে পরিবেশের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানই তো প্রথম খাল কাটা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। এটিই তো পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি। তিনি নতুন পরিচয় দিয়েছেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। যা একটি ফুলের বাগান। সেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা রয়েছেন। তিনি (শহিদ জিয়া) মনে করতেন, বাংলাদেশের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ। সুতরাং দেশপ্রেমিক সবারই উচিত শহিদ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।’
রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান, রাষ্ট্রদূত এসএম রাশেদ আহমেদসহ নিহত ও আহত পরিবারের কয়েকজন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি ও পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, গোলাম সারওয়ার, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, ড. মো. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আব্দুস সালাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. মো. আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল সোহাগ, ড. আব্দুল করিম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, সাংবাদিক-কবি আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, আতিকুর রহমান রুমন, আমিরুল ইসলাম কাগজী, খুরশীদ আলম,মুরসালিন নোমানী, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ১০ জন শহিদের পরিবার এবং ১০ আহতকে সম্মান জানানো হয়।
এর আগে সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জেডআরএফ’র উদ্যোগে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজানের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টও তিনি। জেডআরএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা এনে দেবে সচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা’ স্লোগান নিয়ে গরিব এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে আসছে।
সারাবাংলা/পিটিএম