হামাসে কে হচ্ছেন সিনওয়ারের উত্তরসূরী
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫২
হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হবেন কে, সে বিষয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্বের পাশাপাশি সে তালিকায় আছেন হামাসের প্রাক্তনরাও।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে হামাসের প্রধান। এর আগে গত জুলাই মাসে ইরানে তৎকালীন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর এটি তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো হামাস তার শীর্ষ নেতাকে হারিয়েছে।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) হামাস সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষটি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে বলেন, হামাস প্রতিবারই আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে। মুক্ত ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার পথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যাত্রা অব্যাহত রাখতে এই নেতারা একেকজন আদর্শ হয়ে রইবেন।’
হামাসের পক্ষ থেকে হামাসের নতুন প্রধানের বিষয়ে কিছু জানানো না হলেও, সিনওয়ারের উত্তরসূরি কারা হতে পারেন সে বিষয়ে একটি তালিকা দিয়েছে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সিএনএন‘র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনওয়ার নিজে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারকে অনেকেই তার উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখেন। তার ভাইয়ের মতো, মোহাম্মদ একজন কট্টর নেতা। তিনি সম্প্রতি হামাসের সামরিক কমান্ডার হয়েছেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ারের ভাগ্য এখনো অজানা। গতকাল ইসরায়েলের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা ‘সক্রিয়ভাবে খুঁজছেন’ তাঁকে। এর আগে একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছিলেন, গত বছরের বেশির ভাগ সময় দুই ভাই পাশাপাশি অবস্থানে থেকে কাজ করেছেন। অতি সম্প্রতি গত আগস্টের দিকে একত্র হয়েছিলেন তাঁরা।
সিনওয়ারের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আরেক উত্তরসূরি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চিফ মুসা আবু মারজুক। হামাসের রাজনৈতিক শাখার এই উপপ্রধান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছর অবস্থান করেছেন। এফবিআই তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে চিহ্নিত করলে সেখান থেকে তাকে প্রত্যাবর্তন করতে হয়।
হামাসের সাবেক রাজনৈতিক প্রধান খালেদ মেশালকেও এই তালিকায় রাখা হয়েছে। মেশাল আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সুপরিচিত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছিলেন।
তবে তিনি অতীতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে সুন্নি মুসলিমদের বিদ্রোহে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও হামাস একটি সুন্নি সংগঠন, তবু শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান তাকে সমর্থন করে থাকে। এ কারণে তিনি কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন।
সিনওয়ারের ডেপুটি খলিল আল হায়াও এই তালিকায় আছেন। তিনি কায়রোতে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় হামাসের প্রধান আলোচক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
অন্যদিকে মেশাল এবং আল হায়া উভয়ই বহু বছর ধরে হামাসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। দু’জনকেই ইসরায়ল হত্যা চেষ্টা করেছিল। ১৯৯৭ সালে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কিছু সদস্য কানাডীয় পর্যটকের বেশে মেশালের কানে বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করেন। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রচার পেলে পরবর্তী সময়ে জর্ডানে কয়েকজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে আটক করা হয়।
এছাড়াও গণমাধ্যেমে হামাসে সিনওয়ারের উত্তরসূরী হিসেবে আরও কিছু নাম আলোচনা হচ্ছে।
মাহমুদ আল-জহর পেশায় একজন সার্জন। ইসরায়েল এবং হামাসের অন্যান্য বিরোধীদের প্রতি জহরের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তার বন্ধু এমনকি শত্রুরাও তাকে ‘জেনারেল’ বলেই সম্বোধন করত। ২০০৭ সালে হামাস গাজার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর মাহমুদ আল-জহরই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন।
হামাস নেতা মোহাম্মদ শাবানা, আবু আনাস শাবানা নামেই বেশি পরিচিত। তিনি এখনও হামাসের অবশিষ্ট শীর্ষ ও অভিজ্ঞ সশস্ত্র কমান্ডারদের একজন। বর্তমানে তিনি গাজার দক্ষিণে রাফায় হামাসের একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সিনওয়ারের উত্তরসূরী হিসেবে মারওয়ান ঈসার নামও এসেছে। গত মার্চ মাসে ইসরায়েল বলেছিল, তারা মারওয়ান ঈসাকে হত্যা করেছে। তিনি হামাসের তখনকার সামরিক নেতা মোহাম্মদ দেইফের উপপ্রধান ছিলেন। হামাস গোষ্ঠীতে তিনি তিন নাম্বার শীর্ষ পদে উঠে এসেছিলেন।
রওহি মুশতাহা হামাসের ভেতরে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের একজন আস্থাভাজন ও শক্তিশালী মিত্র ছিলেন। সিনওয়ারের সঙ্গে মিলে মুশতাহা ১৯৮০’র দশকের শেষদিকে হামাসের প্রথম নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গত ৩ অক্টোবরে ইসরায়েল বলেছিল, মুশতাহা তিন মাস আগে গাজায় বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে হামাস তার মৃত্যু নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার কোনওটিই করেনি। ফলে মুশতাহার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।
সারাবাংলা/এইচআই