ভ্যাট আরোপে হুমকির মুখে পড়বে ই-কমার্স
৭ জুন ২০১৮ ২২:৪৮
।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ইন্টারনেট বা সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পণ্য-সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপিত হলে তা ই-কমার্স খাতে বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন খাতটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
তবে দেশে তৈরি হয় না এমন বিদেশি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক কমানোকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কিন্তু তারা এও বলছেন, সফটওয়্যারের যে ছটি এইচএস কোডে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে আরও স্পষ্টতা থাকা উচিৎ। তা না হলে দেশে তৈরি সফটওয়্যার শিল্পও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সংসদে উত্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেট বা সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পণ্য-সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে অনলাইনে কেনাকাটায় খরচ বাড়বে। তবে, দেশে তৈরি হয় না এমন বিদেশি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব এসেছিল খাতটির উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকেই।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর কর বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি বা পদ্ধতি অনুসরণের ইঙ্গিত এসেছে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যেও। এ বিষয়টিকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আইসিটি খাতের বিশ্লেষকরা।
এ ছাড়া বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর সাড়ে ৪ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব সেবায় আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে। মোবাইল ও ব্যাটারি চার্জার আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ২০০০ ভোল্ট পর্যন্ত ইউপিএস ও আইপিএস আমদানিতেও শুল্ক বাড়ছে।
বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কয়েকটি উপকরণে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাটের হার পরিবর্তন নিয়ে কথা হয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সফটওয়্যার আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের যে প্রস্তাব ছিল, সেখানে মনে হয় কনফিউশন তৈরি হয়েছে। আশা করি সরকার এটা বিবেচনা করবেন। আমাদের প্রস্তাবনা ছিল দেশে যেসব সফটওয়্যার তৈরি হয় না, যেমন অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুল এগুলোর ক্ষেত্রে আমরা বলেছিলাম আমদানি শুল্ক কমাতে। সেটাকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছিলাম। সরকার সেটা করেছেও। কিন্তু বাজেটে তার সঙ্গে সঙ্গে ‘আদার সফটওয়্যার’ লেখাতে একই সঙ্গে সব বিদেশি সফটওয়্যারেরও দাম কমে গেল। তাতে তো দেশি সফটওয়্যারকে সুরক্ষা আমরা দিতে পরিনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ই-কমার্সের উপর যেটা হয়েছে যাদের দোকান আছে, যেমন ধরুন আড়ং তাদেরকে ভ্যাট দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে এটার স্পষ্টিকরণ করা দরকার।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বেসিস সভাপতি বলেন, ‘মোবাইল ব্যাটারির ক্ষেত্রে দেখুন এগুলোতে হচ্ছে ডিভাইস, এসব ডিভাইসের উপরে যদি দাম বাড়ানো হয় তাহলে কিন্তু এটা অবশ্যই একটা অন্তরায়। আমাদের অনেকদিনের দাবি ছিল ইন্টারনেটের উপর ভ্যাট কমানো, বাজেট বক্তৃতায় আমরা এর প্রতিফলন দেখিনি।’
এ ছাড়া বেসিসের সিনিয়র সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, সবমিলিয়ে এবারের বাজেট তেমন তথ্যপ্রযুক্তি বান্ধব হয়ে উঠেনি। তারমতে, ই-কমার্স খাতকে এখনই ভ্যাটের আওতায় আনা উচিৎ নয়। তবে আউটলেট আছে এমন যারা অনলাইন ব্যবহার করে ব্যবসা করছেন তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে।
৫ শতাংশ ভ্যাট ই-কমার্সকে ক্ষতির মুখে ফেলবে উল্লেখ করে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ তমাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ই-কমার্স খাতের জন্য এটা বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে। এটি একটি নতুন খাত। মাত্র কয়েক বছর হয়েছে যাত্রা শুরু করেছে। এ ধরণের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাবে। আর অন-লাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হবে। সামগ্রিকভাবে ই-কমার্স খাতে যে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে, তার গতি মন্থর হবে।’
দেশে তৈরি সম্ভব নয় এমন বিদেশি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক কমানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ই-কমার্স প্রসঙ্গে মন্ত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ই-কমার্সের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ভ্যাট আরোপ হলে খাতটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’ বাজেট পাশ হওয়ার আগে যাতে বিষয়টি আমলে নেওয়া হয় সে ব্যাপারে তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও সারাবাংলাকে জানান।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই