ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, প্রতিবাদে ছাত্রদের সিএমপি ঘেরাও
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের আড়াই মাস পর চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিয়ে আকস্মিক ঝটিকা মিছিল হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মিছিলকারীরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিয়ে মিছিলের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে মিছিলকারী সবাইকে গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে, গ্রেফতারে ব্যর্থ হলে সিএমপি কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল তিনটার দিকে প্রথমে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা দামপাড়ায় সিএমপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে একটার দিকে নগরীর জামালখান এলাকায় ২০-৩০ জন যুবক আকস্মিকভাবে মিছিল বের করেন। তারা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’– এমন নানা স্লোগান দেন। রাতেই মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
নগরীর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ ও ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মিছিলকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা সেটা প্রতিহত করার নামে হামলা-আক্রমণ, গোলাগুলি করেছিল। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলাও আছে। সর্বশেষ মিছিলের ঘটনায় আমরা মোট চার জনকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে তিনজন সরাসরি মিছিলে ছিল। তাদের আগের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
আরেকজনকে নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে ওসি ফজলুল কাদের জানান।
এদিকে, শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিয়ে মিছিলের প্রতিবাদে জামালখানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার দুপুর থেকে জামালখানে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-জনতা মিলে সেখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক সমাগম ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তারা। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি ও যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন রাসেল আহমেদ।
পরে মিছিল নিয়ে তারা নগরীর দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘যারা চট্টলার মাটিতে খুনি হাসিনার নামে স্লোগান দিয়েছে, তারাই ছাত্র-জনতা গণহত্যাকারী। রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। এর মধ্যেই তারা চট্টগ্রামে মিছিল করার সাহস পায় কিভাবে? তারা খুনি, স্বৈরাচার হাসিনার নামে স্লোগান দেওয়ার সাহস পায় কিভাবে? এই গণহত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। না পারলে সিএমপি কমিশনারকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো।’
চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা এখনও গ্রেফতার হয়নি। আমরা জানতে চাই, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতরা এখনো কীভাবে ঘোরাফেরা করে? সেই খুনিরা, যারা পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে, গুলি করেছে, তারা এখনো গ্রেফতার হলো না কেন? যারা গত রাতে এই চট্টগ্রামের মাটিতে খুনি হাসিনার নামে স্লোগান দিয়েছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।’
পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্র-জনতা ঘুমিয়ে গেছে তাহলে ভুল করবেন। আমরা রাজপথ থেকে এসেছি, বানের জলে ভেসে আসিনি। খুনি হাসিনার নামে যারা স্লোগান দিয়েছে তাদের গ্রেফতার করুন, নয়তো কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ, চকবাজার থানার ওসিকে চলে যেতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে না পারলে সিএমপি কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
রাসেল আহমেদ আরও বলেন, ‘এই বাংলার জমিনে আমরা খুনি হাসিনার নামে আরও কোনোদিন স্লোগান শুনতে চাই না। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের খুনিদের গ্রেফতার করুন। না পারলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম