Saturday 19 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নকল সিগারেট বেচে ধনকুবের, হয়েছেন কাউন্সিলর-প্যানেল মেয়র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অখ্যাত ওয়ার্ড নেতা থেকে হঠাৎ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাদপ্রদীপে চলে আসেন আবদুস সবুর লিটন। ‘দখলবাজির’ নির্বাচনে দু’বার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। শেষবার প্যানেল মেয়রও হয়েছিলেন।

লিটনের উত্থান নিয়ে তখনই গুঞ্জন উঠেছিল, নকল সিগারেট বিপণন ও সিগারেটের নকল ব্যান্ডরোল আমদানির মধ্য দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন তিনি। তবে সেই গুঞ্জন তখন তেমন ডালপালা মেলতে পারেনি। আওয়ামী লীগের সাবেক এক মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থেকে তিনি গুঞ্জন ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর লিটনের হঠাৎ উত্থানের রহস্য বেরিয়ে আসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গঠিত কমিটির অভিযানে লিটনের নকল সিগারেট ও ব্যান্ডরোলের ব্যবসার প্রমাণ মিলেছে।

আবদুস সবুর লিটন চট্টগ্রাম নগরীর রামপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের দু’বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ের পর সাবেক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিষদের তিনি প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন আবদুস সবুর লিটন।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের সমন্বিত দল গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দু’দফায় নগরীর হালিশহরের মধ্যম রামপুর ধোপাপাড়া এলাকায় একটি, আমতল পেরেক ফ্যাক্টরি এলাকায় একটি ও নয়াবাজার মসজিদ গলিতে একটিসহ মোট তিনটি গুদামে অভিযান চালায়। এর মধ্যে দু’টি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। অন্য গুদামের জব্দ করা পণ্য কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কাস্টমস গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আয়শা সিদ্দিকা সারাবাংলাকে জানান, নকল সিগারেট তৈরির বিভিন্ন উপকরণ অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি গুদামে অভিযান চালানো হয়। গুদাম তিনটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন ও তার ভাই আবদুল মান্নানের।

শুক্রবারের অভিযানে একটি গুদাম থেকে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার পিস সিগারেটের নকল স্ট্যাম্প, ১৪৮টি সাদা বড় রোল, ৪২৫টি সাদা ছোট রোল, ১২৬টি কালো বড় রোল ও ১ হাজার ৩৭টি কালো ছোট রোল জব্দ করা হয়।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুটি গুদাম থেকে ৩৮ হাজার ৯৬৬ কেজি সিগারেট তৈরির পেপার, ১৮ হাজার ৭৪৪ কেজি বিওপিপি ফিল্ম, ৫ হাজার ৭৮৯ কেজি সিগারেট তৈরির রাসায়নিক উপকরণ, ৪ হাজার ৭৮ কেজি সিগারেটের খালি প্যাকেট, ৩ হাজার ১০১ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, ১ হাজার ২৪৮ কেজি সিগারেটের ফিল্টার, ৩২২ কেজি সুগার স্ট্রিপ ট্যাপ এবং ১৩টি সিগারেট তৈরির যন্ত্রাংশ।

সূত্র মতে, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোবাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোবাকো নামে আবদুস লিটনের দুটি সিগারেট তৈরির কারখানা আছে। বিজয় ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ভাই আবদুল মান্নান। এসব প্রতিষ্ঠানে সিগারেট উৎপাদন ও বিপণনের আড়ালে তারা সিগারেটের নকল ব্যান্ডরোল আমদানি ও নকল সিগারেট তৈরি করতো।

২০১৫ সালে আবদুস সবুর লিটন প্রথম দফায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর লিটন তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি পান।

২০২১ সালে ফের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে প্যানেল মেয়র হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন লিটন। জেতার জন্য কাউন্সিলরদের মাঝে আইফোন, কোটপিন, নগদ টাকা, শাড়ি-গহনা বিতরণ করে আলোচনায় আসেন তিনি। এভাবে তিনি প্যানেল মেয়রও নির্বাচিত হন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুলিং, খুলশী, হালিশহর) আসন থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়েও নেমেছিলেন লিটন। ওই আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দীন বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন না পেয়ে পিছিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভেজালকারী, মজুতদার, লুটেরা, দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীদের দলের ভেতর জায়গা করে বিভিন্ন পদ-পদবি পাইয়ে দিয়েছিলেন কিছু মন্ত্রী-এমপি। ব্যক্তিস্বার্থে নিজস্ব বলয় তৈরি করার জন্য কিছু এমপি-মন্ত্রী নানা অপকর্ম করেছেন। আবদুস সবুর লিটনের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী, সে কখন থেকে আওয়ামী লীগ করে– আমরা কিছুই জানতাম না। কিন্তু সে-ও ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিল। কিছু নেতা, এমপি-মন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিলাস পূরণের জন্য এখন আওয়ামী লীগকে ভুগতে হচ্ছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কাউন্সিলর ধনকুবের নকল সিগারেট প্যানেল মেয়র

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর