ভূতুড়ে আ.লীগ কার্যালয় এখন মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল
২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৯
ঢাকা: পোড়া ভবনটির ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের মালপত্র খুলে নেওয়া হয়েছে। নিচতলায় এখনো আগুনে পোড়া ছাই, ভাঙা কাচ, পোড়া কাঠ ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে পানির সঙ্গে মিশে আছে পোড়া কাগজপত্র ও বিভিন্ন আসবাবের অংশ। আগুনে পুড়ে যাওয়া কাগজপত্রসহ ভাঙা কাচ এখনো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মাদকের বোতল দেখা গেছে প্রতিটি তলায়। এসব ফ্লোরের রুমের দরজা-জানালার গ্রিলের পাশাপাশি নিচতলার বড় কাঠের দরজাটিও খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।— সম্প্রতি সরেজমিনে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের এমন চিত্রই দেখেছেন সারাবাংলার এই প্রতিবেদক।
ভবনটির সামনের অংশে স্টিলের অক্ষরে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ ও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের অস্তিত্ব নেই। তবে ভাঙা অবস্থায় দলীয় প্রতীক নৌকা ঝুলতে দেখা গেছে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নামফলক। নেতাকর্মীশূন্য দলের স্থায়ী কার্যালয়টি এখন পরিত্যক্ত ভবন। যা ভাসমান মাদকসেবী ও পথশিশুদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আশপাশের দোকানিরা বলছেন, ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সরগরম উপস্থিতি ছিল। কিন্তু দুপুর ১টায় পরিস্থিতি অনুমান করতে পেরে কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে চলে যায় তারা। এরপর তিন দিক থেকে কার্যালয়ে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরের দু’দিন কার্যালয়ের ভেতর-বাইরে ব্যাপক লুটপাট হয়। এ সময় যেহেতু দেশের আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তাই কেউ কাউকে বাধা দেয়নি।
কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নিলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। সেদিন রাজধানীর রাস্তায় লাখ-লাখ মানুষের বিজয় মিছিল বের হয়; বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিতে ভূতড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ফুটপাতের দোকানদারেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেতাকর্মী ও দারোয়ানবিহীন এই পোড়া ভবনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এটি মূলত এখন মাদকসেবীসহ পথশিশুদের আড্ডাস্থল। যেখানে মাদকসেবনসহ ভাসমান অপরাধীদের কার্যকলাপ চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কর্মরত এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ওখানে যাওয়া হয়নি। কেবল ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর দূর থেকে দেখে এসেছি। ভেতরে ঢোকার সাহস হয়নি। আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। তাই বর্তমানে কী অবস্থায় আছে তা বলতে পারব না।’
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পাশের এক ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। এই দীর্ঘ সময়ে কখনও নেতাকর্মীহীন ভূতুড়ে অবস্থায় দেখিনি আওয়ামী লীগ কার্যালয়। কিন্তু এবার দেখছি।’
ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় ১০ তলাবিশিষ্ট ভবনটি ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ২০১৮ সালের ২৩ জুন এই ভবনটি উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরাতন ভবনটি ভেঙে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভবনটি ছিল আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা। কার্যালয়ের জায়গাটি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশ ছেড়ে চলে যায়। এর পর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩/এ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, দলের নির্বাচনি কার্যালয় এবং তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, গণভবন, সুধাসদনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম