ঋণের প্রতিশ্রুতি তলানিতে নামলেও বেড়েছে পরিশোধের চাপ
২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০০
ঢাকা: আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর ঋণের প্রতিশ্রুতি কমে তলানিতে নেমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৯ শতাংশের বেশি। সেইসঙ্গে আগের অর্থবছরের তুলনায় অর্থ ছাড়ও হয়েছে কম। তবে অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতিতে ধস দেখা দিলেও বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ।— অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই- সেপ্টেম্বর) বৈদেশিক অর্থায়নের এ তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে যত বিদেশি ঋণ এসেছে, পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। প্রান্তিকের প্রতি মাসেই ঋণ ছাড়ের চেয়ে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ছিল বেশি।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ ও অনুদান মিলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ২৮৮ কোটি ৫ লাখ ডলার, সেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। সেই হিসেবে গত বছরের একইসময়ের তুলনায় চলতি বছরে প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৮৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৯ দশমিক ০৫ শতাংশ।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে ঋণের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই, পুরোটাই অনুদান হিসেবে দেবে উন্নয়ন সহযোগীরা। অন্যদিকে, গত অর্থবছরের একইসময়ের প্রতিশ্রুতির মধ্যে বেশি ছিল ঋণ। এদিকে, প্রতিশ্রুতি তলানিতে নামার পাশাপাশি কমেছে ঋণের অর্থছাড়।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থ ছাড় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার ডলার। এরমধ্যে ঋণ ৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং অনুদান ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে পাওয়া গিয়েছিল ১২৮ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণের অর্থ ছিল ১২৩ কোটি ১২ লাখ ডলার এবং অনুদান ছিল ৫ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার ডলার।
অপরদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় এবং প্রতিশ্রুতি কমলেও বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং আসল পরিশোধ করা হয়েছে ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একইসময়ে সুদ ও আসলসহ ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল ৮৭ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এরমধ্যে সুদ ছিল ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং আসল ছিল ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
টাকার অংকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একইসময়ে শোধ করতে হয়েছিল ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থবছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধের অর্থাৎ অর্থবছরের হিসেবে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাতিসংঘ এবং ইউরোপ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা বা দেশ ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে ঋণের প্রতিশ্রুতি না দিলেও অর্থছাড় করেছে প্রায় সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ। এ ছাড়া সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাড় করেছে এডিবি।
জানা গেছে, বিদেশি ঋণের পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্তের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিতে বড়ধরনের ধস দেখা দিয়েছে। এছাড়া, এই দুই মাস আন্দোলনের কারণে কাজ হয়নি তাই ঋণের অর্থছাড়ও কম হয়েছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, গত সরকারের সময় করা ঋণচুক্তির প্রস্তাবগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে পর্যালোচনা করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে না। তবে পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবিত ঋণের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তখন লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি আদায় হবে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম