Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ফের সড়কে শিক্ষার্থীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২৯

ঢাকা: সকাল সাড়ে আটটা। ইত্তেফাক, টিকাটুলি, গুলিস্তানের পথে তীব্র যানজট। যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো উল্টোপথে চলা রিকশা, ভ্যানসহ ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পথচারীদের চলাচলেও মানতে হচ্ছে ট্রাফিক আইন। সড়কে শৃঙ্খলা  ফেরাতে এসব কাজ করছে শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এর ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করার কথা জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ডিএমপির ‘ট্রাফিক পক্ষে’র কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে সম্মানীসহ যুক্ত করা হয়েছে। পরে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।’

সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ডিএমপি ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এই ট্রাফিক পক্ষে এবং এরপরেও আমাদের সঙ্গে ছাত্র ভাইয়েরা থাকছেন। প্রথম অবস্থায় ৩০০ জন ছাত্র আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন ৫ আগস্টের পরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ভালো কাজ করেছে। এখন আমাদের সঙ্গে যদি তারা কাজ করে হয়ত রাস্তার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হবে।’

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ‘ফ্যাসিবাদ সরকারের’ পতনের পর ঢাকাসহ সারাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের আপামর জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সড়কে ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলাকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আনার জন্য ছাত্র-জনতাসহ নগরের জনসাধারণকে সচেতন ও সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে নগরের ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ডিএমপি ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালব্যপী একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যম্যে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতিশীল হবে, তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটার মাধ্যমে জনভোগান্তি অনেক কমে আসবে।’

এ সময় যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে কিছুদিন দেশ প্রশাসনবিহীন অবস্থায় ছিল। সে সময় দেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব নেয়। তখন খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করে শিক্ষার্থীরা।’

ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান তার বক্তব্যে নগরবাসী সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে পরবর্তী বেশ কয়েক দিন দেশের সড়কগুলোতে পুলিশের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ (ট্রাফিক) ব্যবস্থা বলতে গেলে পুরোপুরিই অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই সময়ে সারা দেশের অধিকাংশ সড়কে শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে। ৫ আগস্ট বিকেল থেকে এ দায়িত্ব পালন সীমিত পরিসরে শুরু হলেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা ব্যাপক পরিসরে বাড়ে এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যা প্রায় ১৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে দেখা যায়।

ওই সময় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণভিত্তিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সারা দেশেই সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক কৌতূহল, প্রশংসা ও সমর্থন কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। এমন প্রশংসনীয় কাজের জন্য তাদের স্বীকৃতিপত্র দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ১৫ আগস্টের পর থেকে ট্রাফিক পুলিশ ফিরতে শুরু করে। কিন্তু আগের মত তৎপরতা পুলিশের মধ্যে দেখা যায়না। তাছাড়া সরকার পতনের সময় একটা বড় অংশের পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থায় এখনো ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্টের পর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ৫ আগস্টের পর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে। যা ভবিষ্যতে সড়ক ব্যবস্থাপনায় এই সোর্স কাজে লাগানো সম্ভব হবে। আবার শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান দুর্গাপূজার সময় মন্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে বলেছিলেন, পুলিশের সঙ্গে ছাত্রপ্রতিনিধিরা রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের জন্য। কারণ ছাত্রদের আইডিয়া ইজ বেটার। কেউ তো পারলো না। এই জেনারেশন করে দেখিয়েছে। যদি তাদের পরিকল্পনা ভালো বলেই একটা ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন ঘটাতে পেরেছে। ছাত্রদের যে আইডিয়া আছে, সেটা কাজে লাগিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্র ও পুলিশের সমন্বয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এটি সারা দেশে করা হবে। আমি এই ব্যাপারে আশাবাদী।

এসকল উদ্যোগ ও বক্তব্যের প্রতিফলন সড়কে দেখা গেলো। মতিঝিলে সড়কের শৃঙ্খলায় কাজ করার সময় কথা হয় রোভার স্কাউটের সদস্য শিক্ষার্থী কাশফিয়ার সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সরকার থেকে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা দুই শিফটে মতিঝিল এলাকায় কাজ করছি। সকাল ৮ টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত চারজন কাজ করবো। এরপর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আরো চারজন এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। এ প্রসঙ্গে মতিঝিলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিম কর্মকর্তা শহিদুল বলেন, আজ থেকে শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। এমনই নির্দেশনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ৯ মাসে দেশে ৫ হাজার ৪৮৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৬০১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭৭ জন ও শিশু ৭২৯ জন। রোববার (২০ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায় জানায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

সারাবাংলা/ জেআর/এসআর

ট্রাফিক শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর