‘বিএনপি’র ৫০ শতাংশ ফ্যাসিস্টের দোসর’
২১ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৬
ঢাকা: জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্টের দোসর হলে বিএনপ‘র ৫০ শতাংশ ফ্যাসিস্টের দোসর। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোতে ফ্যাসিস্টের দোসরও কম নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)।
সোমবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় পার্টির বনানীস্থ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হবেনা। আর এই রাজনৈতিক দলটি নিষিদ্ধ করলে সকল সমস্যা সমাধানও হবে না। দলটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল নয়। দলের মধ্যে যারা ক্ষমতায় থেকে অনিয়ম দুর্নীতি হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমার বিবেক অত্যন্ত পরিস্কার। পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। বিগত সরকারের সময় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে বড় মাশুল গুণতে হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করার আহ্বান জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার লক্ষ্য ছিলো মানুষের মধ্যে ভীতি ও হতাশা সৃষ্টি করা। সেভাবেই তিনি টিকে ছিলেন। আজ এক ক্রান্তিলগ্নে এই সংবাদ সম্মেলন। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে আমরা গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি , যা মোটেও সত্য নয়। এই আন্দোলনে এতো রক্তপাত হয়েতে যা বাংলার ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। শেখ হাসিনার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলো সবাই আমরা কেউ মুখ খুলতে পারিনি।’
২০১৮ সালে যখন কোটা বিরোধী আন্দোলন ছিলো তখনও ছাত্রদের পক্ষে ছিলো জাতীয় পার্টি। ২০২৪ এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন ছিলো। এই আন্দোলনে জাতীয় পার্টির দুই কর্মী নিহত হয়েছে এবং এই আন্দোলন অংশ নিতে গিয়ে মামলার স্বীকার হতে হয়েছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এই অবস্থানের পক্ষে নানা রিপোর্টও প্রকাশ পেয়েছে।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আমি সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছি। সরকারের বড় বড় প্রকল্পের সমালোচনা করেছি। মানি লন্ডারীং নিয়ে সংসদে কথা বলেছি। আওয়ামীলীগ শাসন আমলে যারা কথা বলতে সাহস করেনি তখন জাতীয় পার্টির পক্ষে সংসদে এবং সংসদের বাইরে কথা বলেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে জাতীয় পার্টি একদিনও দূরে ছিলো না।’
জিএম কাদের আন্দোলন সময়ের জাতীয় পার্টির নানা দলীয় সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বলেন, ‘তারপরও কেউ যদি বলে থাকে জাতীয় পার্টি গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তা জাতীয় পার্টির জন্য দুঃখজনক। তবে আমাদের দোষর বলা হয় কারণ জাপা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো। অথচ আমরা ২০২৪ এর নির্বাচন বর্জনের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু এর বিপরীতে চাপ অনেক এসেছিলো। অনেকে বলেন এরশাদ সাহেব মেরুদণ্ডহীন তবে সেই চাপের বিরুদ্ধে দাড়ানোর সক্ষমতা সবার নেই। যারা বলছে আমরা দোসর তাদের উদ্দ্যেশে বলতে চাই সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনেকেই অংশ নিয়েছে ২০১৮ সালে। বিএনপিসহ সবাই নির্বাচনে এসেছে তবে সরকারকে বৈধ্যতার দায় কেন জাতীয় পার্টির উপর আসবে? অন্যদের উপরেও এসব দায় বর্তায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্লাকমেইল করা হয়েছে নানাভাবে, আমরা না গেলেও কেউ না কেউ নির্বাচনে যেতো, নির্বাচন হতোই। এক্ষেত্রে ঢালাওভাবে জাতীয় পার্টিকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। সংবিধানসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এক ব্যাক্তির নিয়ন্ত্রনে থাকে। একক ক্ষমতা যার হাতে যায় সেই ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করে। আগেও হয়েছে সামনেও হয়তো হবে। এক দিনের জন্য গণতন্ত্রের চর্চা হয় দেশে। সেই জিনিস পুনরায় চালু হতে পারে।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করেছে। আর বিএনপি জাতীয় পার্টির ওপর জুলুম অত্যাচার করেছে।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মব জাস্টিস, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিসহ জনগন স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরকার জড়িত নয়। তবে একটি চক্র এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে নেওয়া সরকারে পক্ষে কঠিন। সরকার সব কিছু নিয়ন্ত্রনে রাখতে চেষ্টা করছে। সরকারকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। সরকার অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছে। আমরা আশাবাদী।’
সংলাপে জাতীয় পার্টিকে না ডাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকার আলোচনায় ডাকা না ডাকা সেটি তাদের বিষয়। যে বিষয়টি আমাদের কাছে আপত্তিকর তা হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ। আামদের কাছে ওই সব অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘সমন্বয়করা সরকার নয়। সমন্বয়কদের অবস্থান কি? তা স্পষ্ট নয়। জনগণও জানে না।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা মনে করি সরকারের বন্ধু বাড়ানে প্রয়োজন। বন্ধুদের নিয়ে চলা উচিত। শত্রু বাড়িয়ে লাভ নেই। এতে বিপদ ডেকে আনবে।’
সারাবাংলা/ এএইচএইচ/এইচআই