গভীর নিম্নচাপে সাগর উত্তাল, ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশায়
২২ অক্টোবর ২০২৪ ২২:২৭
ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে নিম্নচাপের কেন্দ্র ও এর আশপাশের এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। নিম্নচাপের কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে বইছে ঝোড়ো হাওয়া।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি আরও অগ্রসর হয়ে রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান সারাবাংলাকে বলেন, বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির সহায়তায় ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে এটি ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। গতিপথ বাংলাদেশের দিকে কিছুটা এগিয়ে এলে খুলনা অঞ্চলে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর স্থলভাগে এর মূল আঘাত ভারতের উপকূলেই পড়বে বলে মনে হচ্ছে।
ভারতের আবহাওয়া অফিসের তথ্যও বলছে একই কথা। দেশটির আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা বলছে, পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও দিঘা থেকে ওড়িশার পুরির মধ্যবর্তী স্থলভাগে আঘাত করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ডানা। এরই মধ্যে পুরি থেকে পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে ওড়িশা সরকার। দিঘার ক্ষেত্রে সে ধরনের কোনো নির্দেশনা জারি করা না হলেও সমুদ্রস্নানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এদিকে উপকূলবর্তী এলাকার জেলা প্রশাসনগুলো ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় ১০টি ব্লকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন স্থানীয় জেলেদের সাগর থেকে ফিরিয়ে এনেছে, নতুন করে কাউকে সমুদ্রে যেতে দিচ্ছে না। জেলার সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলো থেকে দেড় লাখ মানুষ সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণাসহ উপকূলের অন্যান্য জেলা থেকেও।
ঘূর্ণিঝড় ডানার আঘাত হানার আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের ৯টি জেলার সব স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত মোকাবিলায় বুধবার থেকেই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
নিম্নচাপটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণদক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যেন স্বল্প সময়ের নোটিশে সেগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
সারাবাংলা/টিআর
আবহাওয়া অধিদফতর ওড়িশা গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ডানা পশ্চিমবঙ্গ