Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংলাপে ডাক না পাওয়ায় আক্ষেপ নেই, ভোটে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হবে জাপা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৪১

ঢাকা: রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রথম ধাপের সংলাপে ডাক পেলেও পরবর্তী আর কোনো ধাপে আমন্ত্রণ পায়নি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথাও নেই দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের।

জাপা নেতারা বলছেন, প্রথম ধাপের সংলাপে অংশ নিয়েই তারা রাষ্ট্র সংষ্কারের জন্য করণীয় হিসেবে তাদের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দিয়েছেন। তাছাড়া দলটির প্রধান মনোযোগ এখন সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সামনের জাতীয় নির্বাচনের দিকে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ফের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবেই ভূমিকা রাখবে— এমনটিই মনে করছে পার্টির হাইকমান্ড। তাদের বিশ্বাস, যে দলই নির্বাচনে জয়লাভ করুক, সরকার গঠন করতে হলে জাতীয় পার্টিকে তাদের লাগবেই।

বিজ্ঞাপন

দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেবে জাপা। এ ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থেই জাপা সরকারকে কোনো চাপ দেবে না। কারণ নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রক্রিয়ায় যত বেশি সময় লাগবে, জাপা নিজেদের গুছিয়ে নিতে তত বেশি সময় পাবে। সাংগঠনিক শক্তিমত্তা বাড়াতে দুটি বড় সমাবেশের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দলটি।

জাতীয় পার্টির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, আগামী ২ নভেম্বর ঢাকায় ও ৩০ নভেম্বর রংপুরে বড় সমাবেশ করবে দলটি। এর আগে আটটি বিভাগে বর্ধিত সভা করবেন দলের আটজন অতিরিক্ত মহাসচিব। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে আট বিভাগের এই বর্ধিত সভার কার্যক্রম শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলে তিনবারই সংসদে বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি। বলা হয়ে থাকে, সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই দলটির রাজনীতি আবর্তিত হতো। কেউ কেউ জাতীয় পার্টিকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলেও আখ্যা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ছিল জাতীয় পার্টি। তারা সবসময় আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকারের চালানো গণহত্যার জন্য এই দলটিও দায়ী। সে কারণেই জাতীয় পার্টিকে যেন সংলাপে আহ্বান না ডাকা হয়, সে দাবি তুলেছেন তারা।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। সরকার পতনের রূপ নেওয়া এবারের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন তারা। এই আন্দোলনে জাতীয় পার্টির দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। আন্দোলন অংশ নিতে গিয়ে মামলার স্বীকার হতে হয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে।

তারা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে কেউ সরকারের সমালোচনা করতে না পারলেও জাপা সংসদে ও সংসদের বাইরে সবসময় সরকারের সমালোচনা করেছে। ফলে জাতীয় পার্টি গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে যে অভিযোগ, তা সঠিক নয়। তাছাড়া জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয় ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। অথচ ২০২৪ সালে বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয় জাতীয় পার্টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য যেসব দল অংশ নেয়, তাদেরও তাইলে আওয়ামী লীগের দোসর বলা উচিত।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংলাপে ডাকা বা না ডাকার এখতিয়ার সরকারের। সেখানে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ায় কিছু যায় আসে না। কারণ রাজনৈতিক দলের ভিত্তি গণমানুষ। ১৯৯১ সালে তৎকালীন সরকার জাপাকে সংলাপে ডাকেনি। তারপরও জাপা ৩৫টি আসন পেয়েছিল। এখনো রাজনীতির মাঠে ও ভোটযুদ্ধে জাপা একটি ট্রাম্প কার্ড।’

পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম মিলন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাপাকে ধ্বংস কতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। জাপাকে দ্বিখণ্ডিত করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি জুলুম-অত্যাচার করেছে। সব বাধা উপেক্ষা করে জাপা জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয়েছে। আশা করছি, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হবে এবং ভোটের লড়াইয়ে সামিল হবে। জাতীয় পার্টি সে লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছে।’

এদিকে জাতীয় পার্টির কূটনৈতিক তৎপরতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গাইউন লুইসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। দলীয় সূত্র বলছে, শিগগিরই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে দলের প্রতিনিধি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণআন্দোলনের পর দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন চিন্তাভাবনা এসেছে। আমরা (জাতীয় পার্টি) তরুণদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে একীভূত হয়ে তাদের রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ করব। আর জাপার কূটনৈতিক তৎপরতা আগে থেকেই শক্তিশালী। পর্যায়ক্রমে সব দেশের সব প্রতিনিধির সঙ্গেই আমাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে, এটা স্বাভাবিক।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

জাতীয় নির্বাচন জাতীয় পার্টি ট্রাম্প কার্ড রাজনৈতিক সংলাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর