চর এলাকায় সম্প্রসারিত হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি
২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১০
ঢাকা: দেশের চর এলাকাগুলোতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের আবাদ বাড়ানোর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। গত এক বছরে ‘বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ প্রকল্পটি প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাস্তবায়নও হয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এসব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি থেকে যথেষ্ট সুফল মিলবে।
২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায় কৃষির প্রকল্পটি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয় ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর। দেশের ৩৫টি জেলার ১২১টি উপজেলার ১ হাজার ৪২৭টি ব্লকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সভায় জানানো হয়, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ১১ কোটি ৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা শতকরা হিসাবে ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ সময়ে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২৪ শতাংশ।
পিএসসি সভায় অংশ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. ময়নুল হক বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশে চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় এক-চতুর্থাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এডিপি বরাদ্দ আছে ৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রকল্প পরিচালক সভাকে জানান, প্রকল্প এলাকায় চাহিদার ভিত্তিতে আখ, ভুট্টা, মরিচ, সরিষা, কালোজিরা, মসুর, মটরশুটি, মুগ, সয়াবিন, সূর্যমূখী, মিষ্টি আলু, তরমুজ, স্যান্ডবার ও মালচিং প্রযুক্তির ওপর মোট ১২ হাজার ৯৮৪টি প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত উপজেলায় দুই কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০০ ব্যাচ কৃষক-কৃষাণীর প্রশিক্ষণ এবং জেলায় ৭৫ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৫ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে চারটি আঞ্চলিক কর্মশালা, ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচ ব্যাচ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ এবং ১৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে চার ব্যাচ ট্রেতে চারা ও পলি হাউজে সবজি উৎপাদনকারী কৃষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।
সভায় জানানো হয়, পচনশীল ট্রে দেশে সহজলভ্য না হওয়ায় পচনশীল ট্রেতে চারা উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়নের জন্য ট্রে আমদানি করতে হবে। বর্তমানে এই ট্রের বাজার দর ডিপিপিতে নির্ধারিত বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি।
সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পাঁচটি কোটেশন পদ্ধতিতে ক্রয় কার্যক্রম শেষ করা হবে। তবে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলেন, ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় শেড নির্মাণ করা হলে নির্মিত শেড ব্যক্তিগত সম্পদ হিসাবে দারি করতে পারে বা চরের দুর্গম এলাকায় নির্মিতব্য শেড প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যবহৃত না হয়ে অপব্যবহার হতে পারে। শেড নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনসহ শেডের সংখ্যা কমানো বা বাদ দিয়ে অন্য কৃষি প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি দেওয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান সভায় বলেন, বীজ, পচনশীল ট্রে, এলএলপি, সোলার আলোক ফাঁদসহ অন্যান্য উপকরণের বাজার দর ক্রমাগত বাড়ছে। দুর্গম চরের অবহেলিত গরীব অসহায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পের ডিপিপিতে উল্লেখিত নির্মাণসহ অন্যান্য উপকরণের বাজারদর বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে সমন্বয় করা না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যতয় ঘটতে পারে। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
সভাপতি ইমদদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রমের গুণগতমান বজায় রাখাসহ পিপিআর ২০০৮-এর বিধিমালা অনুসরণ করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর