Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউপিডিএফের দু’গ্রুপের কোন্দলে অচল পানছড়ি বাজার


৮ জুন ২০১৮ ১৬:২১

।। জসিম মজুমদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

খাগড়াছড়ি: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) দু’টি অংশের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার পানছড়ি বাজার গত ১৯ দিন ধরে অচল। সাধারণ পাহাড়িদের বাজারে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে কেনাবেচা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। কোটি টাকা লোকসানের মুখে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি সমাধানে দফায় দফায় বৈঠক হলেও কাটেনি অচলাবস্থা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশপাশের পাঁচটি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের মানুষ পানছড়ি বাজারে ওপর নির্ভরশীল। অথচ গত ২০ মে থেকে এই বাজারে চলছে বাজার বর্জন কর্মসূচি। বলতে গেলে, গত ১৯ দিন ধরে কোনো বেচাকেনাই হচ্ছে না। এই কর্মসূচির নেতৃত্বে রয়েছে পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসিত)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাহাড়ি ব্যবসায়ী ও ক্রেতা বলেন, আশপাশের এলাকার স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনার জন্য সবাই এই পানছড়ি বাজারের ওপর নির্ভরশীল। কৃষকরা যেমন এই বাজারে উৎপন্ন পণ্য বিক্রি করে সংসার চালান, তেমনি অন্যদেরও নিত্যপ্রয়োজনীয় যে কোনো পণ্যের জন্য ভরসা এ বাজারটিই। তবে যারা বাজার বর্জনের ডাক দিয়েছে, তাদের কাছে ট্রাকে করে ঘরে পণ্য পৌঁছে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের তো সেই সুবিধা নেই।

পানছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হেদায়েত তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইউপিডিএফের দুই অংশের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পানছড়ি বাজারের এ অচলাবস্থা। ২০ মে থেকে এ অবস্থা চলছে। এতে করে জনজীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ হাজার হাজার মানুষের জীবন এই বাজারকে কেন্দ্র করেই চলে। আর আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের তো মাথায় হাত।’

বিজ্ঞাপন

পানছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘পাহাড়িদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা খুবই বিপদের মধ্যে আছি।’ দীর্ঘদিনেও এই সমস্যা সমাধান না হওয়ার জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেন তিনি।

জানতে চাইলে পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. বাহার মিয়া বলেন, ‘এখানকার বাজারের প্রায় সব ব্যবসায়ীই ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। বেচাকেনা না হলে তাদের সবাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। একেকদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের সমাগম হয় এই বাজারে। বাজার বর্জনের ফলে গত ১৯ দিনে কমপক্ষে একশ কোটি টাকার লেনদেন ব্যাহত হয়েছে।’ এ অবচলাবস্থা অবসানে প্রশাসনিক উদ্যোগের দাবি জানান তিনি।

এদিকে, ইউপিডিএফের (প্রসিত) দাবি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কিছু সদস্য পানছড়ি বাজারের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছে। এরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং প্রশাসন এসব ‘সন্ত্রাসী’দের আশ্রয় দিয়ে ইউপিডিএফের (প্রসিত) বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করছে সংগঠনটি। এ পরিস্থিতিতে পাহাড়ের সাধারণ মানুষেরাই বাজার বয়কট করেছে।

ইউপিডিএফ (প্রসিত) সমর্থিত পানছড়ি বাজার বর্জন কমিটির সভাপতি সুশান্ত চাকমা অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসনের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে পাহাড়িরা নিজে থেকেই পানছড়ি বাজার বয়কট করছে। এই বাজার সন্ত্রাসীমুক্ত ও নিরাপদ হলেই কেবল তারা বাজারে ফিরবে।’ যদিও পানছড়ি বাজারের আবাসিক হোটেলে এমন কারো উপস্থিতি নেই বলেই দাবি করছেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা।

বর্জন কমিটির আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফ-ও (গণতান্ত্রিক)। সংগঠনের মুখপাত্র লিটন চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারের হোটেলে কারো অবস্থানের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাছাড়া জনগণ বাজার বয়কট করেনি, ওরা (ইউপিডিএফ প্রসিত) মানুষকে বাজারে আসতে বাধা দিচ্ছে।’ ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপকেই সন্ত্রাসী অভিহিত করে লিটন বলেন, জনগণই একসময় তাদের প্রতিহত করবে।

জানতে চাইলে পানছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি অমূলক, ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে পানছড়ি বাজার বয়কট করা হয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগেও সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছি, কথা বলেছি। আশা করছি, দ্রুতই এ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে।’

সারাবাংলা/টিআর/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর