Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ঝড়ের সংকেত শুনলি ভয়ে বুকটা কাঁইপে ওঠে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২৩

খুলনা: ‘মানষে কইতাছে, আবার নাকি ঝড় আসপে। ঝড় আসলি, আর নদীর পানি বাড়লি তো ওয়াপদা ভাঙবে। আর ওয়াপদা ভাঙলি তো ঘর দোর সব লোনা জলে ভাসাই নেবে। ঘর ভাঙলি যে কত কষ্ট হয়, তা বুঝবে কেডা। প্রত্যেক বছর এই সময়ডা আসলি ভয়তে থাকতি হয়, এই বুঝি সংকেত আইলো। ঝড়ের সংকেত শুনলি ভয় লাগে, বুকটা কাঁইপে ওঠে। ঝড়ে ঘর ভাঙলি থাকপ কোথায়’— এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কয়রা উপজেলার দশালিয়া গ্রামের আফসার আলী মোড়ল।

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আগাম সংকেত শুনে বুধবার (২৩ অক্টোবর) কয়রার দশালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধের পাশে বসে তিনি তার আশঙ্কার কথা জানান।

বিজ্ঞাপন

আফসার আলী মোড়ল জানান, আইলা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পাঁচবার ঘর ভেঙেছে। নিজের বসত বাড়ি সব নদীর ওই পারে। নদী এখন তার জমিতে। অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে নতুন করে ঘর তুলে বাঁধের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। আবারও ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত শুনে আতঙ্কে তিনি।

একই এলাকার রহিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের রাস্তা বাঁধের ওপর। ঘূর্ণিঝড় যদি প্রবল হয়, তাহলে রাস্তা ভেঙে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে, আমরা বিপদে পড়ব।’

খোকাবাবু বলেন, ‘বাঁধের বালুর বস্তা খসে পড়ছে। বাতাস রাতে আরও প্রবল হবে। দিনে দেখা যায়, কিন্তু রাতে তো দেখা যায় না। মাটির ঘরবাড়ি। ঝড় এলে ভয় লাগে। ভাঙলি থাকব কোথায়।’

দশালিয়ার আলিম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আসছে। শুনেছি ৩ নম্বর সংকেত। এখন ভাটা চলছে, অথচ জল নামছে না। এখনো নদীতে জল রয়েছে। জোয়ার এলে জল তো আরও বাড়বে। এই জল দেখে বুক কাঁপে। কারণ গত কয়েক মাস আগে ঝড়ে তিনটি ঘর ভেঙে যায়। এবারও ভয় লাগছে, রাস্তা ভেঙে না আবার বাড়ি ঘর তলিয়ে যায়।’

শুধু আফসার মোড়ল, খোকাবাবু, আলীম ও রহিমা বেগমই নয় তাদের মতোই উপকূলীয় উপজেলা কয়রার অসংখ্য মানুষ ঘূর্ণিঝড় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিশেষ করে জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়েই তাদের উৎকণ্ঠা বেশি।

বিজ্ঞাপন

কয়রা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না বলেন, ‘লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড় দানায় রূপ নিয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রমের আশঙ্কা আছে। তবে যদি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মধ্যরাতে হয় তাহলে বিপদ বেশি। তখন নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট উঁচু জোয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

সার্বিক বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, ‘সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, দুর্যোগকালীন ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য, পানীয় ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরাও যেন নিরাপদে ফিরে আসেন, সেজন্য মৎস্যজীবী সমিতির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/পিটিএম

খুলনা ঘূর্ণিঝড় টপ নিউজ দানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর