৬২ লাখের বেশি কিশোরীকে এইচপিভি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু
২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২০:২৭
ঢাকা: দেশের সাতটি বিভাগে ৬২ লাখের বেশি কিশোরীকে জরায়ুমুখ প্রতিরোধী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের বাইরে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট এবং রংপুর বিভাগে এই ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দ্য ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গ্যাভি) এবং ইউনিসেফের সাহায্যে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখেরও বেশি কিশোরীকে এবার জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দেশের সাতটি বিভাগেই এক মাসব্যাপী এইচপিভি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন চলবে। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে, ঢাকা বিভাগে ১৫ লাখেরও বেশি কিশোরীকে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ইউনিসেফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, ‘ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যানসার বাংলাদেশের মেয়েদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা বিভাগের ১৫ লাখেরও বেশি কিশোরীকে ভ্যাকসিনের মাত্র একটি ডোজ দেওয়ার মাধ্যমে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন করেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে এমন ১০-১৪ বছর বয়সী মেযেদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ঢাকা বাদে বাকি সাতটি বিভাগে আজ থেকে বিনামূল্যে এই এইচপিভি ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। এইচপিভি ভ্যাকসিনের একটি মাত্র ডোজ জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করবে, মেয়েদের স্বাস্থ্য রক্ষা করবে এবং একটি সুস্থ জাতি গঠনে সাহায্য করবে।
২০২৪ সালে গ্যাভি-এর সহায়তায়, ৬২ লাখের বেশি ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। তবে তার জন্য আগে থেকেই ‘ভ্যাস্কইপিআই’ অ্যাপে বা এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিয়মিত এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে।
গ্যাভি, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এর চিফ কান্ট্রি ডেলিভারি অফিসার থাবানি মাফোসা বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রদানের আজকের এই কার্যক্রমের অর্থ হলো আগামী বছরগুলোতে আরও লক্ষাধিক মেয়েকে জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশের নারী ও মেয়েদের সুস্থ জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য জীবন রক্ষাকারী এই ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগ আরও সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ সরকারের অংশীজন হয়ে একযোগে কাজ করতে গ্যাভি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউনিসেফ জানায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১৫ লাখসহ বিশ্বের এক কোটি ৪০ লাখের বেশি মেয়েকে গ্যাভির সহায়তায় এইচপিভির এই প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। টিকাদান ক্যাম্পেইনের গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বিতীয় পর্যায়টি গত বছরের অবিশ্বাস্য অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ, গ্যাভির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আট কোটি ৬০ লাখ মেয়েকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার ক্ষেত্রে চলমান টিকাদান কর্মসূচিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ (ওআইসি) এমা ব্রিগহাম বলেন, ‘ঢাকা বিভাগে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান (ইপিআই) কর্মসূচিকে অভিনন্দন জানাই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে, অনানুষ্ঠানিক ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কোনো মেয়েই যেন এই টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ না পড়ে সে বিষয়টি মাথায় রেখে এখন বাংলাদেশের অবশিষ্ট সাতটি বিভাগের মেয়েদের এই জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় এসেছে।’
জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে প্রতিটি মেয়েকে সুরক্ষিত করতে এইচপিভি ক্যাম্পেইনের সামগ্রিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, এইচপিভি ভ্যাকসিন সরবরাহ, কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনা, ‘ভ্যাক্সইপিআই’ অ্যাপের ব্যবস্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন যোগাযোগ কৌশল তৈরি এবংসর্বাধিক সংখ্যক জনসাধারণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে ইউনিসেফ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার নারীর মৃত্যু হয়। তবে কেবল টিকাদানের মাধ্যমে এই ক্যানসার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এই টিকা হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই টিকা নেওয়া মেয়েদের প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি কমে গেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. বর্ধন জং রানা বলেন, ‘ভ্যাকসিন জীবন বাঁচায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি একটি জীবন রক্ষাকারী পদক্ষেপ। এটি জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে সক্ষম। এই প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে, আমরা বাংলাদেশের নারীদের সুরক্ষিত রাখার এবং স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত গঠনের পথ প্রশস্ত করার ক্ষমতা রাখি।‘
তিনি বলেন, ‘আমাদের অঙ্গীকার অত্যন্ত পরিষ্কার। ২০২৪ সালের অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে দেশব্যাপী চলমান ক্যাম্পেইনে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতিটি মেয়ে যেন এইচপিভি ভ্যাকসিন গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা। আমরা সবাই মিলে দেশের মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ নিশ্চিত করতে সফলভাবে কাজ করে চলেছি।’
ইউনিসেফ জানায়, ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায়ে অর্জিত শিক্ষা থেকে, টিকাগ্রহণে উপযুক্ত সব মেয়ে যেন ভ্যাকসিন নিতে পারে তা নিশ্চিত করা সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত নেই – এমন মেয়েদের ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধাগুলো উত্তরণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (কওমি মাদরাসা) ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে আরও নারী শিক্ষকদের সম্পৃক্ত এবং কমিউনিটি পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
আগামী মাসে ক্যাম্পেইনটি শেষ হওয়ার পর থেকে এইচপিভি ভ্যাকসিন পঞ্চম শ্রেণির মেয়েদের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েছে এমন ১০ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলেও জানায় ইউনিসেফ।
সারাবাংলা/এসবি/এইচআই