ইসরায়েলকে হতাশ করল সৌদি আরব
২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০২
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনায় সৌদি আরব সরকার তার পুরনো শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও তা জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। যুদ্ধের এক বছর পর সৌদি সরকার তার ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে জোর দিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এ খবর জানায়।
গত বছর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। যে চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যকে মৌলিকভাবে বদলে দিত এবং ইরান ও তার মিত্রদের আরও একঘরে করে রাখতো। আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও সামনে আসত না।
এখন সেই চুক্তির বাস্তবায়ন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক দূরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর সেই চুক্তি এখন নিরাশার দোলাচলে। গাজা যুদ্ধ এখন যেদিকে মোড় নিয়েছে তাতে একটি শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা শুরুর বিষয়টি সব মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে।
অন্যদিকে সৌদি আরব তার পুরনো শত্রু ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। সেই সঙ্গে দেশটি জোরালো কন্ঠে বলছে, যে কোনো কূটনৈতিক চুক্তি তথা সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আগে ইসরায়েলকে অবশ্যই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে একটা কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। তবে নিশ্চিতভাবেই সেটা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেভাবে ঘটছে না। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বরাবরই বলে আসছেন যে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তার প্রশাসন রিয়াদের সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছে।
চলতি মাসেই উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। এর আগে কখনো এমন বৈঠক হয়নি। এই উদ্যোগ প্রাথমিক স্তরের হলেও শুধুমাত্র এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান ধর্মীয় বৈরিভাব দূর করবে না, বরং বৈরিতার কারণে এই অঞ্চলে রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে বিগত কয়েক দশকে যে রক্তপাত হয়েছে তা বন্ধ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এরপর থেকেই তেহরানের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরবও সফর করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সফর করেছেন ইরাক ও ওমানে। যার লক্ষ্য দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রশমন করা। এর বাইরে তিনি, জর্ডান, মিশর ও তুরস্কও সফর করেছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যখন বারবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি অস্বীকার করছেন, তখন সৌদি কর্মকর্তারা গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক ফোরামসহ সব জায়গাতেই দ্বী-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি তুলছেন। সৌদি আরব বলছে, ইসরাইল যদি সৌদিকে পাশে পেতে চায় তাহলে একমাত্র পথ হলো- স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও তাকে স্বীকৃতি দেওয়া।
সৌদি ব্যবসায়ী ও রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং নিওম প্রকল্পের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলি শিহাবি বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ থেকে যেটা হয়েছে, তা হলো-এই অঞ্চলে ইসরায়েলের অঙ্গীভূত হওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেল।’
তিনি আরো বলেন, ‘সৌদি আরব দেখছে যে, গাজার ঘটনার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা ক্রমেই তিক্ত হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলিরা যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করে এবং একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি না দেখায়, তাহলে এই অবস্থা খুব একটা বদলাবে না।’
তবে তেহরান ও রিয়াদ সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও সৌদি আরব ও এর উপসাগরীয় মিত্ররা ইরানের কূটনৈতিক পদক্ষেপের আন্তরিকতা নিয়ে এখনও সন্দিহান। কারণ, ইরান হামাস ও হিজবুল্লাহর পাশাপাশি ইয়েমেনের হুতিদেরও অস্ত্র ও সমর্থন করে যাচ্ছে। যারা একসময় সৌদি আরবে হামলা করেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েল আক্রমণ করে প্রায় ১ হাজার ২০৬ জনকে হত্যা করে। জিম্মি করে আরো প্রায় ২শ’ জনকে। এ ঘটনায় ইসরায়েল হামাস অধিকৃত গাজায় যে ভয়াবহ আগ্রসান শুরু করে তা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি নিরীহ সোমরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সারাবাংলা/এইচআই