Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রিকসে বরফ গলল জিনপিং-মোদির, সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:২৫

আঞ্চলিক রাজনীতি আর অর্থনীতির নানা হিসাব-নিকাশে দ্বন্দ্ব থাকলেও চীন-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্টই উষ্ণ ছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সাক্ষাৎ-বৈঠকও ছিল নিয়মিত। ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। তখন থেকে শুরু করে দীর্ঘ চার বছরে আর দুজনের মধ্যে কোনো বৈঠক হয়নি।

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত সেই বরফ গলল এসে ব্রিকস সম্মেলনে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই অর্থনৈতিক জোটের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের নেতা। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাশিয়ার কাজানে সেই সম্মেলনের ফাঁকেই সাইডলাইনে বৈঠকে বসলেন শি জিনপিং আর নরেন্দ্র মোদি।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব লাদাখ সীমান্তে বিরোধের সমঝোতা হওয়ার মাত্র দুদিন পরই তাদের এই বৈঠক হলো। বেঠকে জিনপিং-মোদি দুজনেই তাদের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আরও সংলাপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

যেভাবে মুখোমুখি চীন-ভারত

চীন-ভারত সম্পর্কে কয়েক দশক ধরেই উত্তেজনা চলে আসছে। এর মূল কারণ অমীমাংসিত সীমান্ত। তিন হাজার ৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর নদী, হ্রদ ও তুষারপাতবেষ্টিত সীমান্তরেখা প্রায়শই পাল্টে যেত। মাঝেই মাঝেই সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে দুই দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি হয়ে পড়ত, সংঘর্ষে জড়াত।

১৯৬২ সালে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল চীন ও ভারত। ওই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।

২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ নাম্বার অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয় ভারত। ওই সময় চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানায়। কেননা কাশ্মীরের মধ্যে লাদাখ অন্তর্ভুক্ত, যার কিছু অংশ চীন দাবি করে আসছে।

ভারত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পরে ২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় লাদাখের গালওয়ানে চীন সীমান্ত বাহিনী ভারতের অংশে প্রবেশ করলে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ভারতের ২০ সেনা ও চীনের চার সেনা ওই সংঘর্ষে নিহত হন। এর পর দুই দেশের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও সীমান্ত সমস্যা দূর করা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

ওই বছরের শেষের দিকে দুই দেশের বিতর্কিত সীমান্তের কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়। ওই সময় দুই দেশেই সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। ২০২১ সালে উত্তর সিকিম ও ২০২২ সালে সীমান্তের তাওয়াং সেক্টরে দুপক্ষের সেনারা ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

সামরিক স্থবিরতা দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে। নয়া দিল্লি এ সময় ভারতে চীনা বিনিয়োগের তদন্ত করেছিল। ওই সময় টিকটকসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধও করে ভারত। এমনকি চীনে সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছিল।

যে ঘোষণা এলো এ সপ্তাহের শুরুতে

গত সোমবার (২১ অক্টোবর) নয়া দিল্লি বলেছিল, ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারি নিয়ে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, ‘আমরা চীনের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি। অতীতে আলোচনার ফলে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে বেশ কিছু জায়গায় সমধান করা যায়নি।’

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতায় এসেছে। পূর্ব লাদাখ সীমান্তে বিরোধ শেষ করতে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়াং গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকদিন ধরেই সীমান্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভারত ও চীন আলোচনা চালাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশ একটি সমাধানে পৌঁছেছে। চীন বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করেছে। ভারতও এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে। আশা করছি আগামী দিনে ওই সমাধানের সূত্র ধরেই দুই দেশ একযোগে কাজ করবে।

চীন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মোদি ও জিনপিং ঘোষণা করেছেন যে তাদের বিশেষ প্রতিনিধিরা সীমান্ত প্রশ্নের একটি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত ও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য মিলিত হবেন। এতে আরও বলা হয়েছে, তাদের মন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তারাও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ও পুনর্গঠনে কাজ করবেন।

বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বৈঠকটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দিল্লি ও বেইজিংকে অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঐক্য বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহু-মেরুকরণ ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করতে হবে।’

জিনপিং আরও বলেন, ‘চীন ও ভারত উভয়ই প্রাচীন সভ্যতা, প্রধান উন্নয়নশীল দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমরা উভয়ই আমাদের নিজ নিজ আধুনিকীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আছি।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, লাদাখ সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের সমঝোতা এবং এরপর জিনপিং ও মোদির বৈঠকের মধ্য দিয়ে চীন ও ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথে কিছুটা হলেও এগিয়ে গেল। ঠিক এই মুহূর্তে দুই দেশের সম্পর্ক যেভাবে বিরাজ করছে, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে তা দুই দেশকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

সারাবাংলা/এইচআই/টিআর

চীন-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক জিনপিং-মোদি ব্রিকস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর