আমদানি বাড়ছে, সবজির দাম কমছে চট্টগ্রামের বাজারে
২৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আড়তে সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে কমতে শুরু করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে সবজির দামও। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরায় এখনো প্রায় সব সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দুয়েকদিনের মধ্যে খুচরায় সবজির দাম আরও কমতে পারে।
এদিকে মাসখানেক ধরে অস্থিরতার পর খুচরায় ডিমের দামও কিছুটা কমেছে। তবে এখনো সরকার নির্ধারিত দামে পাইকারি ও খুচরায় ডিম মিলছে না। মাছ-মাংসের দাম আগের মতোই ক্রেতার অস্বস্তির পর্যায়েই আছে।
উৎপাদন অঞ্চলে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে গত দুমাস ধরে চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ কমে যায়। আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতাদের মতে, প্রতিদিনের চাহিদার বিপরীতে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে সবজি আসছিল মাত্র ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। বাজারে সংকট তৈরি হওয়ায় দুমাস ধরে বেশকিছু সবজির দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
তবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরীর বৃহত্তম সবজির আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে ট্রাক ট্রাক শীতকালীন বিভিন্ন সবজি ঢুকতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই-তিন দিন ধরে সবজির সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এ জন্য পাইকারি বাজারে অধিকাংশ সবজি কেজিতে অন্তত ২০ টাকা দাম কমেছে। সরবরাহ বাড়লে আগামী সপ্তাহে পাইকারিতে দাম আরও কমবে বলে তারা জানিয়েছেন।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। এ জন্য আমরা কিছুটা কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারছি। পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গাসহ প্রায় সব সবজি আমরা ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। আসলে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ‘সিন্ডিকেট ভাঙা’র লক্ষ্য নিয়ে গত এক সপ্তাহে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, বকশিরহাট, পাহাড়তলী কাঁচাবাজার, পতেঙ্গা স্টিলমিল বাজার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ও দুই নম্বর গেট কর্ণফুলী কাঁচাবাজারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয়টি ‘সেলস সেন্টার’ খোলা হয়েছে। ন্যায্য মূল্যে এসব কেন্দ্র থেকে নানা পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীতে খোলাবাজারে পাঁচ পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি শুরু করেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। পণ্যের মধ্যে আছে- ব্রয়লার মুরগির ডিম, আলু, পেঁয়াজ, পেঁপে ও করলা। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠকদের পক্ষ থেকেও তিনটি বিক্রয় কেন্দ্র খুলে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের নেওয়া উদ্যোগের কারণে কাঁচাবাজারের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমে আসার সুফলও মিলছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে।
পাইকারিতে দাম কমার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুচরা বাজারেও। বৃহস্পতিবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে খুচরায় লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙা, পটল, বরবটি, করলা চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, মূলা, বাঁধাকপি, বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৯০ টাকা দরে। কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ৬০-৭০ টাকা কমেছে, বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা থেকে কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।
এ ছাড়া কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো ১৩০ টাকা, ফুলকপি ১৪০ টাকা, শিম ২০০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে। লাল শাক, মূলা শাক, পুঁই শাক ও মিষ্টি কুমড়া শাক ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নগরীর কদমতলী থেকে রিয়াজউদ্দিন বাজারে যাওয়া এক ক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকটার দাম ১০-২০ টাকা কমেছে। ধনে পাতার দাম একেবারে কমে গেছে। শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। এ জন্য দাম কমছে। আশা করছি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে আরও কম দামে পাব।’
বিক্রেতা মোবারক আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীতের সবজি বের হয়েছে। এতদিন যেসব সবজি বেশি বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর চাহিদা এখন কমবে। প্রায় সবগুলোর দাম ৩০-৪০ টাকা কমেছে।’
এদিকে গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে ডিমের দাম ছিল ডজনপ্রতি ১৭০ টাকা। বৃহস্পতিবার ২০ টাকা কমে ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। সরকারি দর অনুযায়ী খুচরায় এক ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা হওয়ার কথা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ইয়াকুব স্টোরের মালিক মো. ইয়াকুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আমাদের ১৪০-১৪২ টাকায় ডিমের ডজন কিনতে হচ্ছে। আমাদের গাড়িভাড়া আছে। ১০ টাকা গাড়িভাড়া হিসেব করলে আমরা দেড় শ টাকার কমে বিক্রি করতে পারি না।’
মুদির দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভোগ্যপণের দামও কিছুটা কমছে। বিভিন্ন ধরনের চাল-ডালের দাম কেজিতে অন্তত ২-৩ টাকা কমেছে। পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১০ টাকা কমেছে।
বাজারে ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা ও ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চালের মধ্যে সাধারণ আতপ ও সেদ্ধ মানভেদে ৫৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে এবং সুগন্ধী চাল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০৫ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চীনা রসুন ২১০ থেকে ২২০ টাকা, চীনা আদা ২৪০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৬০ দরে বিক্রি হয়েছে।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে মাছ-মাংসের দাম নিয়ে ক্রেতাদের অস্বস্ত্বি এখনো কাটেনি। বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ৫০ টাকা বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
বাজারে মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। আর ২৫০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্পিও, কালবাউস কার্পজাতীয় মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আড়াই থেকে দুই কেজি ওজনের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাজলি মাছ ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা ও লইট্যা মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯৫ টাকা, সোনালী মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৪০ টাকা, গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
চট্টগ্রাম বাজারদর রিয়াজউদ্দিন বাজার সাপ্তাহিক বাজার সাপ্তাহিক বাজারদর