বেড়ি বাঁধে ভাঙনের আতঙ্কে খুলনার উপকূলবাসী
২৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০০
খুলনা: ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ এরই মধ্যে আঞাত হেনেছে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে। বাংলাদেশের স্থলভাগে সরাসরি আঘাত করছে না এই ঘূর্ণিঝড়। তবে এর প্রভাবে বৃষ্টি ঝরছে খুলনা-বরিশাল বিভাগের উপকূলে। এ অবস্থায় খুলনার উপকূল জুড়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। দুর্বল বেড়ি বাঁধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে জেলার কয়রা-পাইকগাছা উপজেলার বাসিন্দারা। জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে বা উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে পাইকগাছা উপজেলার জামাইপাড়া, বাসাখালী, হারিখালী, বাইনতলা খেয়াঘাট, পশ্চিম কানাইমুখী, ননিয়াপাড়া, পাইশমারী, কুড়ুলিয়া, সেলেমানপুর ও পুরাইকাটি এলাকার ৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ। এ ছাড়া কয়রা উপজেলার দশহালিয়া, শিকারিবাড়ি, হোগলা, কালীবাড়ি, গুরিয়াবাড়ি, ৪-৫-৬ নম্বর কয়রা, মঠবাড়ি ও কাটমারচর এলাকার প্রায় ৭. দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধও ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জেলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেন পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় নিতে পারেন। এসব কেন্ত্রে তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ মানুষ ও ৫৬০টি গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার ও ওষুধ। স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।
খুলনার কয়রা উপজেলার দশালিয়া গ্রামের রহিমা বেগম বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের রাস্তা বাঁধের ওপর। ঘূর্ণিঝড় যদি প্রবল হয়, তাহলে রাস্তা ভেঙে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে, আমরা বিপদগ্রস্ত হয়ে যাব।’
কপোতাক্ষের নদের তীরে মদিনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা নিরাঞ্জন বলেন, ‘আগে ভরা জোয়ারেও এলাকার বেড়ি বাঁধের অর্ধেক পর্যন্ত পানি থাকত। এখন বাঁধ কানায় কানায় পূর্ণ হয়। আর ঘূর্ণিঝড় হলে জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাসে নদের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়বে। তখন সবকিছু ছাপিয়ে লোকালয় লোনাপানিতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে।’
পাইকগাছা উপজেলা আসলাম বলেন, ‘উপকূলের সব নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বেড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
বেড়ি বাঁধ প্রসঙ্গে কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর বরাদ্দ হয়। কিন্তু বাঁধ সঠিকভাবে মেরামত হয় না। ১৫৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে কয়রায়। এর মধ্যে সাড়ে ৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া অনেক স্থানে বাঁধ দুর্বল অবস্থাতেও রয়েছে।’
এ অবস্থায় ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নিতে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানালেন কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বিভিন্ন জায়গার বেড়ি বাঁধ পরিদর্শন করেছি। কিছু জায়গায় অসুবিধা আছে। সে জায়গাগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি তুলে ধরে ইউএনও বলেন, ‘সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগকালীন ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও পানীয়সহ সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে।’
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় নিয়ে খুলনার উপকূলীয় উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় সতর্কমূলক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোও প্রস্তুত রয়েছে।’
সারাবাংলা/টিআর