বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়বে ৩.১ ডিগ্রি পর্যন্ত, সতর্কতা জাতিসংঘের
২৫ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৫১
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সময়ের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এমন একটি সময়ে এসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনকার মতোই নীতিমালা বাস্তবায়ন হতে থাকলে এ শতাব্দীর মধ্যেই বিশ্বের তাপমাত্রা ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ইউএন এমিশন গ্যাপের এই প্রতিবেদনে সবাইকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব হবে ভয়াবহ। বিশ্বব্যাপী তাপপ্রবাহ ও বন্যার মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াগত বিপর্যয়কর ঘটনা নাটকীয়ভাবে বাড়তে থাকবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হয়েছিল গ্লাসগোতে। ওই সময় থেকেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে উঠে আসা ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ২০২১ সালে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল সেখানেও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এ শতাব্দীতে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
ইউএন এমিশন গ্যাপের প্রতিবেদন বলছে, দেশগুলো যদি তাদের কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এরই মধ্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করে, তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ থেকে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। আর এসব নীতিমালার পাশাপাশি শূন্য-কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এরই মধ্যে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। কারণ কপ সম্মেলনগুলোতে একের পর যেসব প্রতিশ্রুতি দেশগুলো দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ অবস্থায় ইউএন এমিশন গ্যাপের প্রতিবেদন এমন একটি সময়ে এলো যখন কপ-১৯ সম্মেলনের বাকি আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ। এই সম্মেলন থেকে রাষ্ট্রনেতাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা রয়েছে, যা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য কার্যকর হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের ধারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো না গেলে এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিও ঠেকানো সম্ভব হবে না।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন খাতে কার্বন নিঃসরণ ২০২২ সালের তুলনায় ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। এই খাতের কার্বন নিঃসরণ এখন করোনা মহামারির আগের স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সড়ক পরিবহণগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও।
জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইউএনইপির ড. অ্যান ওলহফ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের আরও সব মারাত্মক প্রভাব আমরা দেখতে শুরু করেছি। ঘরবাড়ি ও অফিস-আদালতকে শীতল করার জন্য জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে, যা তাপপ্রবাহে ভূমিকা রাখছে। আবার জলবিদ্যুতের উৎপাদনও কমছে। এর ফলে কয়লা বিদ্যুতের দিকেই আবার ফিরতে হচ্ছে। এর কোনোটিই ভালো কিছু নয়।
সারাবাংলা/এনজে