‘শেখ হসিনারকে আশ্রয় দিয়ে ভারত জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে’
২৬ অক্টোবর ২০২৪ ২২:১৪
ঢাকা: গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর বলেছেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে ভারত ১৫ বছর সমর্থন করেছে। শেখ হাসিনার গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরশাসক ,গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং গণহত্যাকারীদের সমর্থন করায় ভারতের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত।’
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে দলটির তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা ও পায়রা উড়িয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ অনুষ্ঠানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি যেন সংসদে একক কোন দলের আধিপত্য না থাকে। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব ভালো না। যেই একবার ক্ষমতা যায়, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে প্রশাসনসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ২০২১ সালে দল ঘোষণার সময়ই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র, কার্যকর সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনায়ন এবং সংখ্যানুপাতি নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম একই সাথে দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান নয়। দলীয় প্রধান একটা দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, সরকার প্রধান পুরো রাষ্ট্রের। সেজন্য আমরা বলেছি একই সাথে কেউ দলীয় প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা যেভাবে স্বৈরাচার হয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে সে ধরণের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়, মানুষ আর প্রথাগত রাজনীতির পথে হাঁটতে চায় না। তাই আমাদেরও বদলাতে হবে। ‘
নুর আরও বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ বিগত সময়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে রাজপথে ছিলো, নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে। আজকে দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এই আন্দোলনে আমাদের জেলে যেতে হয়েছে, উপদেষ্টাদের নয়। সরকার ব্যর্থ হলে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তাই আমরা চাই না সরকার ব্যর্থ হোক। কিন্তু এ ধরনের সরকারের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের সরকার দরকার। গণঅধিকার পরিষদ কারও ওপর ভর করে দুই-চারটা আসনের রাজনীতি করে না। গণঅধিকার পরিষদ দলীয় মার্কা নিয়ে আগামীতে ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে। কোনো কোনো দলের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করছে, দলীয় কাজে বাধা দিচ্ছে। তাদের বলবো শেখ হাসিনার পতন থেকে শিক্ষা নিন। ছাত্রীলগ নিষিদ্ধ হয়েছে, আপনারা এসব করতে থাকলে, আপনারাও নিষিদ্ধ হবেন।’
দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ‘২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে আমাদের পথচলা। চলার পথে হাজারো প্রতিবন্ধকতা ছিলো। কিন্তু আমরা থেমে যাইনি। ছাত্র অধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের উত্থান। আমরা ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা লড়াই করেছি। গণঅভ্যুত্থানে কেন নূরুল হক নুরকে গ্রেফতার করা হলো? অনেক ইতিহাস লেখা বা বলা যায় না। ইতিহাসের পিছনে ইতিহাস থাকে। সেই ইতিহাস সৃষ্টির মাধ্যমেই আমাদের অগ্রযাত্রা এবং রাজনৈতিক দল গঠনের তৃতীয় বছর শেষে চতুর্থ বছরে পদার্পণ। এসময়ে সাংবাদিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম তারা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আজকে চারিদিকে গণঅধিকার পরিষদের জোয়ার। আমরা জনগণের কাছে সুযোগ চাই। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ট্রাক প্রতীকে প্রার্থী দিবে গণঅধিকার পরিষদ। একবার তরুণদের ক্ষমতায় এনে দেখুন না, তারা কিভাবে দেশটা গঠন করে।’
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনিম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ, পেশাজীবি অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পি প্রমুখ।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই