ইসরায়েলের হামলার জবাবে কোন পথে হাঁটবে ইরান?
২৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:০৬
ইরানে ইসরয়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনাকে আরও গভীর সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই উত্তেজনা আরও বাড়বে নাকি তা প্রশমিত হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরানের সর্ব্বোচ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও তার প্রধান উপদেষ্টাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর।
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানকেও কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখে পড়তে হয়েছে। ইসরায়েলের এই হামলার জবাবে তারা ফের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র ছুড়ে আরেক দফা হামলা চালাতে পারে। বিকল্প হিসেবে সরাসারি ইসরায়েল ভূখণ্ডে হামলা চালানোর মতো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে পারে ইরান।
ইসরায়েল এরই মধ্যে জানিয়ে রেখেছে, ইরান ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে তারা প্রতিশোধ নিতে বসে থাকবে না। অন্যদিকে ইরান যদি সরাসরি আক্রমণ না করে, সেটি তাদের দুর্বলতার বহির্প্রকাশ মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, ইরান রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা ও সামরিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ইসরায়েলের চেয়ে দুর্বল।
দুটি বিকল্পের মধ্যে ইরান কোনটি বেছে নেবে সেটি পুরোটাই নির্ভর করছে খামেনি ও তার পারিষদের ওপর। বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বাওয়েন বলছেন, এ ক্ষেত্রে তারা সেই পদ্ধতিই বেছে নেবেন যেটি ইরানের ইসলামিক রাজত্বের অস্তিত্বের জন্য সব সবচেয়ে কম ক্ষতিকর হয়।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে দীর্ঘ দিন ধরেই। এর মধ্যেই গত ১ অক্টোবরে ইসরায়েলে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ইরান। এরপর থেকেই ইসরায়েল বড় হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে চরজন নিহত হয়েছেন।
শুধুই হুমকি?
ইসরায়েলের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ও পরে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম থেকে সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়, এই হামলার জবাব কী হবে তা এরই মধ্যে ঠিক করে রেখেছে ইরান। তাদের বিবৃতির ভাষাও ইসরায়েলের মতোই— হামলা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার অধিকার তাদের আছে। তবে এবারে কোনো ধরনের হামলার ঝুঁকি এত বেশি যে ইরান হয়তো শেষ পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসতে পারে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারও এমনই আশা করছেন। স্টারমারও আমেরিকার মতোই মনে করেন যে ইসরায়েলের হামলা ছিল তাদের আত্মরক্ষার পদক্ষেপের অংশ। তিনি বলেন, আমার কাছে এটা স্পষ্ট যে ইরানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ইসরায়েলের আছে। একইসঙ্গে এটিও স্পষ্ট যে আমাদের আঞ্চলিক আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়াতে হবে এবং সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাতে হবে। এ জন্য ইরানের পালটা হামলায় জবাব দেওয়া উচিত নয়।
১ অক্টোবর ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলে চালিয়েছিল, তারপর থেকে দেওয়া দেশটির বিবৃতিগুলোর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। এক সপ্তাহ আগেও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তুরস্কের এনটিভি নেটওয়ার্ককে বলেছিলেন, ‘ইরানের ওপর যেকোনো আক্রমণকে বিপৎরেখা অতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই ধরনের কোনো হামলাকে বিনা উত্তরে ছেড়ে দেওয়া হবে না।’
ইসরায়েলি হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছিলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সরকারের যেকোনো আগ্রাসন পূর্ণ শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে।’ ইসরায়েল সীমিত কোনো হামল চালালে ইরান তার জবাব দেবে না— এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর