‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারটুকু এখন দরকার, বাকিটা পরবর্তী সরকার করবে’
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩৩
ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। পরবর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে বাকি সংস্কার হবে।
তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়টি এসেছে ছয় বছর আগে। তখন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-৩০ দিয়েছেন, সেখানেই ছিল। তরুণ প্রজন্মসহ সবাই ভোট দিতে চায়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনে সংস্কারটুকু আগে দরকার।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর রিপোটার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৮০ দিনের গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু মাহামুদ বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার মৌলিক বিষয়গুলো জনগণের সেবার জন্য ৩১ দফা দিয়েছে বিএনপি। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সংস্কার ধারণা আসেনি, আগেই এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসুরু আরও বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার কখনোই থেমে থাকেনা। সরকারের সংস্কার কমিটি আগামী ডিসেম্বরে সংস্কারের রিপোর্ট দিবে। আগে রিপোর্ট আসুক তারপর দেখা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। যে আন্দোলন হয়েছে তার প্রতিফলিত হবে ভোটের মাধ্যমে। জনগণের কাছে বারবার ভোটের জন্য প্রার্থীদের যেতে হবে। তরুণ প্রজন্মসহ সবাই ভোট দিতে চায় সেই ঐক্যমতে জাতি আছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনে সংস্কার আগে দরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে যেসব কথাবার্তা আসছে সেগুলো ব্যক্তি মতামত কী না বা সরকারের ভাবনা কী না তা পরিস্কার না। রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। নির্ধারিত এজেন্ডার বিষয়ে ঐক্যমত হলে চলবে না, জাতির জন্য তা ভালো হবে না। ঐক্যমত হবে সবার মতামতে।’
আমির খসরু বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৮০ দিনের কার্যক্রমের উপর জনগণের চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ চলছে। আমরা দেশটাকে কী ভাবে গড়বো, সে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এসেছে। সকলেই চাচ্ছে সরকারকে সহযোগিতা করতে। জনগণও চাচ্ছে যে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। জনগণ এতদিন ভোট দিতে পারেনি। এবার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চায়। নির্বাচন নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দরকার। জনগণ চায় স্বচ্ছ, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান গুরুত্ব হওয়া উচিত নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করা। এতে যতদিন সময় লাগবে, তাদের ততদিন চালানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনকে সঠিক পথে আনতে পারেনি সরকার। কাজগুলো এত সহজও নয়। পুলিশ এখনও ঘুষ খাচ্ছে। এজন্য বলছি পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে অভিজ্ঞতার দরকার। জনপ্রশাসনে অস্থিরতা চলছে। সরকার গত ৮০ দিনে কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করছে বলে আমার মনে হয়না। এমনকি জনগণের কল্যাণমুখী কোন কাজ করেছে তাও দেখছিনা।’
মান্না বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শর্তহীন সমর্থন করবোনা। আবার দান্ধাবাজও বলছি না। কারণ তারা ভুল করলে আমারা ধরিয়ে দিবো। তাদের বড় ভুল রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে তালগোল পাকানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিয়েছে এ ধরনের অভিযোগ থাকলেও বিএনপি এখনও লজিক্যাল অবস্থায় রয়েছে। তারপরও বিএনপি সমালোচনার মধ্যে পরছে।
মান্না আরও বলেন, ‘আমার কাছে অবাক লাগে ছাত্ররা যখন বঙ্গভবন ঘেরাও করে। ছাত্ররা তো সরকারেও আছে তারা কিভাবে বঙ্গভবন ঘেরাও করে? ছাত্ররা সরকারে থেকেও সরকারকে মানছে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয় জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির বিষয়টি ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন। জাতীয় কাউন্সিল গঠন করে আগামী নির্বাচনসহ জনগণের দাবি-দাওয়া সকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণ করা দরকার।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি এহসনাল হুদা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মূল কাজ হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে একটি নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করবে। এখন কেন জাতীয় সরকার গঠন হবে?
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। সংস্কার আর সংস্কার নিয়ে দেশটাকে অস্থিতিশীলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন।’
এবি পার্টির মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘তিন মাস আগে আমাদের মাঝে যে ঐক্য ছিল তা ভুলে যেতে শুরু করেছি। একটি কথা সকলের মনে রাখা দরকার বর্তমান সংবিধান হিসেবে কিন্তু আমরা সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী। আগামীতে কিন্তু এজন্য আমাদের ফাঁসী হতে পারে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই