Monday 28 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চমেকের ৭৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:২৯

ফাইল ছবি: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ৭৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১১ শিক্ষার্থীকে মুচলেকা নিয়ে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই সদ্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। যা সোমবার (২৮ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাত জনকে দু’বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন- এমবিবিএস ৫৯তম ব্যাচের মুশফিকুন ইসলাম, আসেফ বিন তাকি ও রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬০তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ ও মাহমুদুল হাসান এবং বিডিএস ৩০তম ব্যাচের ইমতিয়াজ আলম ও সাজেদুল ইসলাম হৃদয়।

১৫ জনকে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন- এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের শামীম আহমেদ ভূঁইয়া ও মো. ফয়সাল আহমেদ, ৬১তম ব্যাচের মো. সাইফ উল্লাহ, ৬২তম ব্যাচের জাকির হোসেন সায়াল, সৌরভ দেবনাথ, মো. নাইমুল ইসলাম, সাদ মোহাম্মদ গালিব ও সাজু দাশ, ৬৩তম ব্যাচের জাবেদুল ইসলাম এবং বিডিএস ২৯তম ব্যাচের পল্লব বিশ্বাস, জিয়া উদ্দিন, কনক দেবনাথ ও শাওন দত্ত, ৩১তম ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম জিসান এবং ৩২তম ব্যাচের দেবজিৎ বিশ্বাস।

৩৯ জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন- এমবিবিএস ৫৮তম ব্যাচের তৌফিকুর রহমান ইয়ন, ৬০তম ব্যাচের আতাউল্লাহ বোখারী, নাঈমুল মোস্তফা আকাশ, আহসান উল্লাহ ও মুকেশ রঞ্জন দে, ৬১তম ব্যাচের হাসিন শাওয়াদ রাব্বি, সুমিত চক্রবর্তী, এইচ আর মাহফুজুর রহমান, ‍মুনাম খান, মাশফি জুনায়েদ, আহসানুল কবির মাহারুস, মো. হাসান রাব্বি ও এবিএম তৌহিদুল হাসান, ৬২তম ব্যাচের চমন দাশ অয়ন, মো. এনামুল হাসান সীমান্ত, এইচ এম আসহাব উদ্দিন ও সৌরভ বেপারি, ৬৩তম ব্যাচের হাবিবুল ইসলাম নিলয়, রজত আচার্য্য, মো. মেহেদী হাসান, প্রীতম দে অনিক, রাহুল সুশীল, জাকি আল হাসান, মো. মাহফুজুর রহমান, সৌরেন বড়ুয়া ও তাফহিমুল ইসলাম, ৬৪তম ব্যাচের শেখ রিমন হোসাইন, মো. শাহরিয়ার রহমান, মো. তাইফুল ইসলাম তামজেদ, নাফিস বিন মুক্তাদির, মো. ইয়াসীন আরাফাত আলিফ ও মো. রাকিবুল ইসলাম, ৬৫তম ব্যাচের ফাতিন আহবাব ইশমাম এবং বিডিএস ৩০তম ব্যাচের মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব, ৩১তম ব্যাচের মো. মাহতাব উদ্দিন রাফি ও মোহাম্মদ আনিস, ৩২তম ব্যাচের অর্ঘ্য সিকদার, জয়ন্ত নাগ তীর্থ ও ফয়সাল আজিজ রিয়াদ।

বিজ্ঞাপন

১৪ জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন- এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের ফয়েজ উল্লাহ, ৬২তম ব্যাচের উৎস দে, মাহিন আহমেদ ও জুলকাফাল আহমেদ শোয়েব, ৬৩তম ব্যাচের পূজন সাহা, অগাস্টো দীপ নিলয় ও শেখ শামীম হাসান, ৬৪তম ব্যাচের সৌরেন চক্রবর্তী, আর্য দেব সরকার ও মো. মোস্তফা জামিল, ৬৫ তম ব্যাচের আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ওমর এবং বিডিএস ৩০তম ব্যাচের আল নিবরাজ বিন হোসাইন, ৩৩তম ব্যাচের মো. শাহাদাত হোসাইন ও ৩৪ তম ব্যাচের শ্রেয়ঙ্কর সাহা।

এছাড়া নিজের ও অভিভাবকের মুচলেকায় শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, এমবিবিএস ৬০ তম ব্যাচের আরাফাত সিহাব, ৬২ তম ব্যাচের মো. ইব্রাহিম খলিল ও ফারহান রহমান ফাহিম, ৬৩ তম ব্যাচের লামিয়া আক্তার, জান্নাত আক্তার লাবণী, দীপ্তেশ চক্রবর্তী, মুবিন রহমান শাওন, মো. শায়খুল আলম খান, চৌধুরী আরিয়ান আনোয়ার ও তারেকুল ইসলাম তন্ময় এবং বিডিএস ৩১ তম ব্যাচের মো. এহেসানুল কবির রুমন।

চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন করার অভিযোগ তদন্ত করার জন্য আমরা কমিটি করেছিলাম। কমিটি মোট ৮৬ জনের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৭৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে না মর্মে মুচলেকা দেওয়ায় ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে চমেক কর্তৃপক্ষ। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অবৈধভাবে কক্ষ দখল, অঙ্গীকার ভঙ্গসহ কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব শিক্ষার্থীর যথেচ্ছাচারী আচরণের কারণে কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসগুলোতে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু এরপরও তারা আরও শিক্ষার্থী নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত আধিপত্য ও ব্যক্তিগত হিরোইজম প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়। কলেজ ক্যাম্পাস এবং ছাত্রাবাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও তারা সেটা অমান্য করে এ ধরনের কাজে লিপ্ত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চমেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল। এর মধ্যে একটি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং আরেকটি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মদদপুষ্ট ছিল। উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের সংঘাতময় কর্মকাণ্ডে বারবার চমেক ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতো। সর্বশেষ শাস্তি পাওয়া ৭৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে সংঘাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা যখন তদন্ত কমিটি গঠন করি, তখন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ছিল না। এসব শিক্ষার্থী মারামারি-সংঘর্ষ, আধিপত্য বিস্তারসহ ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। এজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চমেক শিক্ষার্থী টপ নিউজ বহিষ্কার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর