শিক্ষার্থীদের ভোট গড়াল শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে, রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউট বন্ধ
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩১ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১২
রাঙ্গামাটি: স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন ঘিরে রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ‘পক্ষপাতে’র অভিযোগ তুলে শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ভোটে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে মূলত বিতর্কের সূত্রপাত। সেই বিতর্ক শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন গড়ানোর পর সাত দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম। উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন আয়োজন উপলক্ষে গতকাল রোববার (২৭ অক্টোবর) রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে আলোচনা ওঠে। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনে নতুন প্রথম বর্ষ এবং পুরনো প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
তবে আলোচনায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আপত্তি তুলে বলেন, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। নতুন প্রথম বর্ষ এবং পুরনো প্রথম বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আবার সব শিক্ষার্থীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে অভিমত দেন। এ অবস্থায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা অনড় থাকলে বিষয়টি শিক্ষক-ইন্সট্রাক্টরদের জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেটি জানিয়েও তারা কোনো সুরাহা পাননি।
এ আলোচনার জের ধরে রোববার দুপুরে দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ডাইনিং হলে খাবার খাওয়ার সময় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গিয়ে ডাইনিং হল বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সেখানে তৃতীয় বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। হলের চেয়ার ভাঙচুর ছাড়াও দুপক্ষের মধ্যে ‘মারধর ও চুলাচুলি’র ঘটনাও ঘটে বলে তথ্য মিলেছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে যান সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসাসহ পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থাতেই শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার মীমাংসা না হওয়ায় রাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। বৈঠকে রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা. পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল ইসলাম, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ সীমা মণ্ডলসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে জানানো হয়েছে যে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন ‘জোর করে’ কাউকে পদত্যাগ করানোর সুযোগ নেই। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সোমবার থেকে সাত দিন নার্সিং ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় জেলা প্রশাসন।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ সীমা মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন ঘিরে একটু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। পরে ঘটনা বড় হওয়ায় রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়েছে, এখন আপাতত কারও পদত্যাগের সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে লিখিত দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত সাত দিন প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা সারাবাংলাকে বলেন, রোববার স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষে অবস্থান দেখা দেয়। পরে তারা সব শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টরদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টরদের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে। পরে বৈঠক থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, তাদের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত আগামী সাত দিন (সোমবার থেকে) একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি
রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটি গঠনের চিঠি পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সই করা এক অফিস আদেশে এ কমিটির কথা জানানো হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরীন সুলতানাকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইফুল ইসলাম ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. অমিত দে কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রোববার তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ (সোমবার) একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই তদন্ত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স করানো হয়। এর মধ্যে ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ের আসন সংখ্যা ৮০, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে আসন সংখ্যা ২৫ জন।
বর্তমানে সেশন জটের কারণে রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে প্রথম বর্ষের নতুন ও পুরনো ব্যাচ মিলিয়ে শিক্ষার্থী ১৬০ জনের কাছাকাছি। এর মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছাড়া বাকি তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই একটি পক্ষে পরিণত হয়েছেন। আর শিক্ষক-ইন্সট্রাক্টরদের পদত্যাগ দাবি জানাচ্ছেন মূলত নতুন-পুরনো প্রথম বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
সারাবাংলা/টিআর
নার্সিং ইনস্টিটিউট রাঙ্গামাটি রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউট শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবি