বেপরোয়া ছিনতাই-ডাকাতি, জনজীবনে বাড়ছে আতঙ্ক
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:০৭
ঢাকা: গত কয়েকদিনে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একের পর এক ঘটনার হোতাদের ধরলেও থামানো যাচ্ছে না ছিনতাই-ডাকাতি। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে মোহাম্মদপুর এলাকায়। এমনকি সেখানে দিনের বেলায়ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাই অপরাধীদের ছিনতাই-ডাকাতিতে উদ্বুদ্ধ করছে। ডাকাতি-ছিনতাইয়ে জড়িতদের পাশাপাশি এর পেছনের মূল হোতাদের ধরতে হবে। না হলে এগুলো বন্ধ হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া শাখার উপ কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ঢাকা শহরে যতগুলো ছিনতাই হয়েছে তার প্রতিটিই শনাক্ত হয়েছে। আসামিও ধরা পড়েছে। তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। কেউ বাদ নেই।’
মোহাম্মদপুর এলাকা ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য- এ বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে ডিসি মিডিয়া বলেন, ‘মোহাম্মদপুরে সম্প্রতি যেসব ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিটি তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি আসামিদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। সবশেষ সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। ২৬ ও ২৭ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া, সেনাবাহিনী প্রত্যেকটি মহল্লায় অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়েছে।’
জানা যায়, রাজধানীর ৫০টি থানার অন্তত ১৫০টি স্পটে ছিনতাই এখন নিয়মিত ঘটনা। পুলিশের সেপ্টেম্বরের তালিকায় ঢাকায় ছিনতাকারী ও ডাকাতের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, সন্ধ্যা, রাত কিংবা ভোর, এমনকি ভর দুপুরেও প্রকাশ্যে ছিনতাই হচ্ছে। অস্ত্রের মুখে অল্প বয়সী কিশোরদের কাছে ধরাশায়ী হচ্ছেন যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে আহতের ঘটনাও বাড়ছে।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে থানায় শতাধিক নারী-পুরুষ ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিয়েছেন। এসব ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হলেও বাকিগুলো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছিনতাই চক্রে ২৫-৩০ জন রয়েছে। রাতে সবাই একসঙ্গে চাপাতি, রড ও পাইপ হাতে বের হয়। সামনে যাকে পায়, কুপিয়ে সব নিয়ে নেয়। তাদের কৌশল একটু ভিন্ন। হেঁটে নয়, তারা চাপাতি হাতে দৌড়াতে থাকে। আতঙ্ক তৈরি করতে সমানে কোপাতে থাকে। মানুষ, দোকান কিছুই বাদ দেয় না। তাদের দাপটে অনেকেই সন্ধ্যায় বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।’
থানায় অভিযোগের পর মোহাম্মদপুর এলাকার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্ধীদের একটি দল শনিবার (২৬ অক্টোবর) মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করলে ওইদিনই ঢাকা উদ্যানে একটি অস্থায়ী সেনাক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এর পর গতকাল মোহাম্মাদিয়া হাউজিং লিমিটেড, হাউজিং সোসাইটি, বসিলা গার্ডেন সিটি, জাপান গার্ডেন সিটি, চাঁদ উদ্যান, নবোদয় হাউজিং ও আদাবর থানা এলাকায় ৪৬ পদাতিক ডিভিশন থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন যৌথ অভিযান চলছে, অনেকে গ্রেফতারও হচ্ছেন।
এলাকাবাসী বলছে, সেনাক্যাম্প স্থাপন ও পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধির পর ছিনতাই কমে আসতে শুরু করেছে। তবে এটি একেবারেই বন্ধ হওয়া দরকার।
বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে দেখা যায়, একটি সুপারশপে মুখোশ পরা ডাকাতরা চাপাতি দেখিয়ে কর্মচারীদের জিম্মি করে টাকা লুটে নিচ্ছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলার গার্ডেন সিটি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
২০ অক্টোবর সকালে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় দুটি মোটরসাইকেলে ছয়জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে নেসলে কোম্পানির গাড়ি আটকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর আগের দিন মোহাম্মাদপুর চার রাস্তার মোড়ের মোহাম্মদ হানিফের (হানিফ পরিবহন) বাড়িতে সেনা ও র্যাবের পোশাক পড়ে ৮০ লাখ টাকা ডাকাতি করে। এ ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে।
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নানা কারণে মোহাম্মদপুর আগে থেকেই রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। ১০ শীর্ষ সন্ত্রাসীর বৃত্তান্ত খোঁজ করলে দেখা যায়, এর মধ্যে ছয় জনের জন্ম মোহাম্মদপুরে। জনবল সংকটের কারণে পুলিশ সেখানে ঠিকমতো টহল দিতে পারছে না।’
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এই এলাকার ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা দ্রুতই কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম