‘আ.লীগের রাজনৈতিক অধিকার থাকা উচিত কি না, জনগণ বিবেচনা করবে’
২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৫৯
ঢাকা: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশে একটি গণহত্যা চালানোর পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অধিকার থাকা উচিত কিনা, তা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বিচার-বিবেচনা করবেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান উপদেষ্টা।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কিনা— জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা আমার বলার জায়গা না। এখন আপনি যদি মনে করেন, যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, আরও ৪০-৫০ হাজার মানুষের অঙ্গহানি ঘটিয়েছে, চোখ কেড়ে নিয়েছে এবং এখনো তারা ওইটার পক্ষে কথা বলে, এখনো তাদের নেত্রী ২৮৭ জনকে দেখে নেবে এমন হুমকি দিচ্ছেন, যিনি গণহত্যা মামলার আসামি, আমার মনে হয় না এই দেশের মানুষ তাদের বিচারের আগে অ্যাকসেপ্ট করবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা বিবেচনা করে দেখেন, একটা গণহত্যা চালানোর পর এখনও একটা দল বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমাদের এত বড় আন্দোলনের নেতাদের কিশোরগ্যাং বলার চেষ্টা করে, আরও মানুষকে হত্যা করার হুমকি দেয়, সেই দলের রাজনৈতিক অধিকার থাকা উচিত কিনা; তা প্রতিটি মানুষই বিবেচনা করবেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দেখা যাবে, তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, সব দেশেই মৃত্যুদণ্ড রহিত করার কথা বলে জাতিসংঘ। তাদের একটি অপশনাল প্রটোকল আছে। ওই প্রটোকলের মূলকথাই হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড রদ করার জন্য। কিন্তু পৃথিবীর খুব অল্প দেশেই মৃত্যুদণ্ড রদ করেছে। এটা তাদের অঙ্গীকার থেকে বলবেই। কিন্তু আমাদের যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম, আমাদের যে জুডিশিয়াল কালচার আছে, সেগুলোতো আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। সবচেয়ে বড় কথা, মৃত্যুদণ্ড রহিত করার যে অপশনাল প্রটোকল, তাতে বাংলাদেশের কোনো সরকারই পক্ষ রাষ্ট্র হয়নি। আমাদের কোনো সরকারের পক্ষ থেকেই এই অপশনাল প্রটোকলের পক্ষরাষ্ট্র হওয়ার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরইমধ্যে সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে, কেবল প্রধান উপদেষ্টার সই বাকি আছে।
নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে আপনাদেরকে একটা জিনিস শেয়ার করতে পারি, সেটা হচ্ছে, আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, আপনারা বলতে পারেন। কারণ আমাদের নির্বাচন কমিশনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হয়ে গেছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি যতদূর জানি, প্রজ্ঞাপনটায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সই করে দিলেই আপনারা জানতে পারবেন, হয়ত তিনি করেছেনও, আজ-কালের মধ্যেই জেনে যাবেন। সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন ফর্ম করা হবে। এরপর আমাদের ভোটার তালিকা করা হবে। আগেও বলেছি, ভোটারতালিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন ছিল। গত নির্বাচনই ছিল ভুয়া, যে কারণে ভোটারতালিকা নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা ছিল না। এবার আমরা ভুয়া নির্বাচন করবো না।
আসিফ নজরুল বলেন, এবার অসাধারণ একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। ভোটারতালিকা হালনাগাদ করতে হবে। শুধু এতটুকু বলতে পারি, আমাদের নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
এর আগে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। এই দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সেক্ষেত্রে মানবাধিকার যেন নিশ্চিত করা সেটা বলেছি। জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কাজ করছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। আমাদের হেড অফিস পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ