৩ বছরের প্রকল্পে আড়াই বছর পার, ১০০ বগির একটির কাজও শেষ হয়নি
৩০ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১০
ঢাকা: রেলের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ব্রডগেজ লাইনের জন্য ৫০টি ও মিটারগেজ লাইনের জন্য আরও ৫০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ তথা বগি পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। এর মধ্যে প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ১০০ বগির কোনোটির পুনর্বাসনের কাজই শেষ হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৫০টি বিজি (ব্রডগেজ) ও ৫০টি এমজি (মিটারগেজ) যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুর্নবাসন’ প্রকল্প এমনই স্থবির হয়ে রয়েছে। প্রকল্প শুরুর প্রায় আড়াই বছর তথা তিন-চতুর্থাংশ মেয়াদ পেরিয়ে এর ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৭ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতির দশা তো আরও বেহাল— মাত্র শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ! প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে অন্তত ২০টি বগির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, রেলের প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১ জুন থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা। রেলের বগি পুনর্বাসনের প্রকল্পটিতে রেলের অপারেটিং সিস্টেমসহ আরও নানা অঙ্গ যুক্ত রয়েছে।
গত ৩ অক্টোবর রেল ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রেল সচিব আবদুল বাকী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান অপারেটিং সিস্টেমকে আপডেট করে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমে নিয়ে আসতে হবে। এই কাজটি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে করতে হবে। ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য বৈদ্যুতিক বাতি সংযোজনের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের কোন কোন আইটেমে ব্যয় কমানো সম্ভব, তা যাচাই করতে হবে।
পিএসসি সভায় এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ঈদের আগে, অর্থাৎ আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ২০টি কোচ পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। রেলওয়ের বিদ্যমান অপরেটিং সিস্টেমকে আপডেট করে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের কাজটি বিআরএএসএসের মাধ্যমে চালুর জন্য রিরেক্টর ইনভেন্টরি কন্ট্রোল ও বিআরএএসএস প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রতিনিধি বলেন, ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমে কিউআর কোড রাখা হচ্ছে নাকি কম্পিউটারে মালামালগুলো ইনপুটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে, তা জানা প্রয়োজন। কার্যক্রম বিভাগের প্রতিনিধি বিদ্যমান মনিটরিং সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম থাকা প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য বলেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সভায় বলেন, ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমটি সিংগেল সোর্সেস সিলেকশনের মাধ্যমে করার বিষয়টি ডিপিপিতে উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন লাগবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, সিংগেল সোর্স সিলেকশনের মাধ্যমে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম করতে গেলে এখানে আইনি জটিলতা, টেন্ডার ভেরিয়েশনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। রেলপথের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) বলেন, ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমটি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে করা সমীচীন হবে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমানে যে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চলাচল করছে তা ৩৬৫ কিলোওয়াটের ওপরে। এগুলো বাতিল (অবসোলেট) হয়ে গেছে। ডিপিপিতে ৬৬ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল জেনারেটর কেনার সংস্থান রাখা সমীচীন হয়নি। ৬০ থেকে ৭০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল জেনারেটর ক্রয়ের সংস্থান ডিপিপিতে রাখা হলে ঠিক হতো।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ডিপিপিতে বগিগুলোতে সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতি সংযোজনের সংস্থান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কোচে অত্যাধুনিক এলইডি লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। সেটি করলে ব্যয় সাশ্রয় হবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, প্রকল্পে বগি পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহে ২৫টি প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। ১৭টি লটে সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়েছে। আটটি লটের পুনঃদরপত্র আহবান করা হয়েছে। প্রকল্পের কোচ পুনর্বাসনের মাসভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বছরে ৪০টি কোচ পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত আছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর