‘নতুন প্রজন্মের কিছু শব্দ চয়ন শেখ হাসিনার কথাই মনে করিয়ে দেয়’
৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:০৩
ঢাকা: বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, নতুন প্রজন্ম যারা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের কথা মাঝে মধ্যে শুনি। তাদের কিছু কিছু শব্দ চয়ন আমাদের শেখ হাসিনার কথাই মনে করিয়ে দেয়। কিংবা ফাসিবাদী কাঠামোর কথাই মনে করিয়ে দেয়।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জাল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান-গণতান্ত্রিক: নাগরিক বিতর্ক’ শীর্ষক মতিবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই স্বাধীনতাটা যখন আমার মতো কনসার্ন ততটুকুই স্বাধীনতা। আপনি মত প্রকাশ করতে গেলেই সেটা যদি আমার মতের সঙ্গে না মেলে ওইটা কিন্তু আমার ভালো লাগে না। হয় আমি বলব, আপনি হাসিনার দালাল, নয় আমি বলব, আপনি বিএনপি কিংবা জামায়াতের দালাল? আমার যেভাবে পছন্দ আমি আপনাকে সেভাবে গালিটা দিয়ে দেবো?’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী কাঠামো আমরা একদিনে পরিবর্তন করতে পারব? এক মাসে পরিবর্তন হবে?- এটা আমরা আশা করি না। কিন্তু এই আওয়াজটা উঠুক। সমাজে আওয়াজটা জারি থাকুক।’
বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, “আমরা এমন একটা রাষ্ট্রে বাস করি যে রাষ্ট্রে আমি ছোটবেলা থেকে ‘আই হেইট পলিটিক্স’ নিয়ে বড় হয়েছি। ধরে নেওয়া হয়, পরিবারের সবচেয়ে অকর্মণ্য বেয়ারা ছেলেটাই পলিটিক্স করবে। যাকে দিয়ে আসলে আর কিছু হবে না। পড়াশোনা করার ইচ্ছা নাই, জীবনে কিছু হতে পারবে সেই আশাও নাই। তাকে দিয়ে রাজনীতি করানো হয়। সে রাজনীতিতে যায় এবং রাজনীতিতে তার ভালোই উত্থান হয়। এ কারণে রাজনীতিতে মেধার চর্চা, রাজনীতিতে জ্ঞানের চর্চা, পড়াশোনার চর্চা, দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা, অন্যের মতকে বিবেচনা করার চর্চা, অন্যের মতের প্রতি সহিষ্ণুতার চর্চা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোতে হয় তেলবাজি ও পেশী শক্তির চর্চা, টাকার চর্চা। আরও হয় যেকোনো উপায়ে ভুল শুদ্ধ না বুঝে একটা স্লোগান দেওয়ার চর্চা। রাজনীতিটাকে আমরা এরকম রাখব কি না? এই প্রশ্ন আমি রেখে গেলাম।’
লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি চর্চার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যে লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি বাংলাদেশে চলছে। যে ট্যাগিংয়ের রাজনীতি বাংলাদেশে চলছে, যে ধারায় রাজনীতি বাংলাদেশে চলছে; সেই রাজনীতিতে আমি নিজেকে ফিটিং করাটা ডিফিকাল্ট মনে করছি। শুধু আমি না, এটা নিশ্চয়ই অনেকে মনে করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজটা জারি রাখব। আমি বিশ্বাস করি, এই প্রজন্ম না হোক, পরের প্রজন্ম কিংবা তার পরের প্রজন্ম, একটা সুষ্ঠ ধারার রাজনীতি বাংলাদেশে দেখতে পারবে। রাজনীতি যদি ঠিক না হয়, একটা নির্বাচন বা শাসক পরিবর্তন, কোনোদিনই আপনার ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারবে না।’
রাজনীতির পরিবর্তনের দায়িত্ব কি কেবলমাত্র রাজনীতিবিদদের? এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপির সাবেক এই নারী সংসদ সদস্য বলেন, ‘মূল দায়িত্বটা রাজনীতিবিদদের। কিন্তু এখানে আপনাদেরও দায় কিন্তু কম না। আমাদের বড় বড় রাজনীতিবিদ যারা আছেন, তারা কেউ বাংলাদেশে চিকিৎসা নেন না। সে কারণে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর কী হাল সেটা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নাই। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের সন্তানরা ভুলেও এদেশে পড়েন না। যেটুকু পড়েন ইংরেজি মাধ্যমে। সুতরাং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার এই অবস্থা। কাজেই রাজনীতিবিদদের কতটুকু দুর্বৃত্ত হওয়ার স্বাধীনতা দেবেন, সেটা কিন্তু জনগণকেই নির্ধারণ করতে হবে।’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আব্দুর নূরের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
টপ নিউজ ফ্যাসিবাদী কাঠানো বিএনপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা শব্দ চয়ন