‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের স্থান বাংলাদেশে নেই’
৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:১৩
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ফ্যাসিস্ট আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, এ রকম কোনো ফ্যাসিস্ট দলের স্থান বাংলাদেশে নেই।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। তিনি আরও বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তাতে রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ভারত সরকারকে কোনো চাপ দেওয়া হবে না। সেটি করলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো জায়গা হবে না। তার দল আওয়ামী লীগেরও কোনো জায়গা হবে না। কেননা তারা দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেদের সুবিধার জন্য রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে। সুতরাং তাদের মতো কোনো ‘ফ্যাসিস্ট দল’ গণতান্ত্রিক ধারায় স্থান পাবে না।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের আমলে হওয়া নির্বাচনে কারচুপি, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ এনেছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার দলকে রাজনীতি থেকে সাময়িক নিষিদ্ধের আলোচনাও শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, রাজনীতিতে ফিরতে হলে আওয়ামী লীগকে সংস্কারের মধ্য দিয়ে আসতে হবে। আবার কারও কারও অভিমত, আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা উচিত।
সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে ড. ইউনূসের ধারণা আওয়ামী লীগ ভেঙে যেতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে হাসিনার দলের জন্য কোনে সুখবর নেই। আর আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নির্ধারণ করা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যে’র ভিত্তিতে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন কি না, এ প্রশ্নও করা হয় তাকে। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কোনো রাজনৈতিক দল গঠনেরও ইচ্ছা নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে সংস্কারকাজ শেষ করা। নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসব আমরা।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘কিছু ঘটনা’ এবং ‘খুব অল্পসংখ্যক’ প্রাণহানির কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার জন্য তাদের টার্গেট করা হয়েছিল, ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য নয়।
ড. ইউনূস বলেছেন, বিদ্যুৎ, পানি এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পের ক্ষেত্রে দিল্লির সমর্থনের অভাব রয়েছে। তিনি নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে স্বাগতম জানিয়েছেন। দুই প্রতিবেশীর যেমন সম্পর্ক থাকা উচিত তা সর্বোত্তম পন্থায় থাকতে হবে বলে মনে করেন ইউনূস।
সারাবাংলা/টিআর