Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪টির মধ্যে ১০টিই অকেজো, লিফট নিয়ে বিপাকে যবিপ্রবি

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৮

লিফট আছে, কিন্তু সচল নেই। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি লিফটের মধ্যে ১০টি লিফটই এমন অকেজো হয়ে রয়েছে। ছবি: সারাবাংলা

যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আলোচিত ‘লিফটকাণ্ডে’র সেই ১৪টি লিফট নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪টির মধ্যে ১০টি লিফটই অকেজো ও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। লিফট সচল করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে স্থাপন করা লিফটগুলো নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রায় ১০ কোটি টাকার এই কাজে পাঁচ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শর্ত লঙ্ঘন করে সরবরাহ করা লিফট বারবার অকেজো হয়ে পড়ছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে এগুলো চালু করলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সে রকম হলে দুর্ঘটনার দায় কে নেবে— এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনে (জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন, মুন্সী মেহেরুল্লাহ হল, তারামন বিবি হল ও টিএসসি ভবন) ১৪টি লিফট স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ১৪টি লিফটের মালামাল সরবরাহ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।

ওই সময়ই অভিযোগ ওঠে, দরপত্রের স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে ১৪টি লিফটের এই মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, ‘মেশিনরুম টাইপে’র পরিবর্তে ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ এবং কম ‘ডোর সাইজ’ ও ‘মোটর পাওয়ারে’র লিফট সরবরাহ। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যবিপ্রবির আলোচিত এই ‘লিফটকাণ্ড’ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হলে উচ্চ আদালত ‘লিফটকাণ্ড’ তদন্তের জন্য দুদক ও ইউজিসিকে নির্দেশ দেন।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব লিফট স্থাপন নিয়ে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক ও ইউজিসি। ছবি: সারাবাংলা

দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল-আমিন সারাবাংলাকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশের আগেই যবিপ্রবির আলোচিত ‘লিফটকাণ্ড’ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুতই এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এদিকে, যবিপ্রবির ১৪টি লিফটের ১০টিই অকেজো ও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। লিফট সচল করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের চারটি লিফটের মধ্যে দুটি সচল রয়েছে। মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলের চারটি লিফটের সবগুলোই বন্ধ। তারামন বিবি হলের চারটি লিফটের মধ্যে একটি মাত্র লিফট পাঁচতলা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি ভবনের দুটি লিফটের একটি সচল রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যবিপ্রবির লিফটকাণ্ডের পরতে পরতে অনিয়ম হয়েছে। শর্ত লঙ্ঘন করে দুর্নীতির মাধ্যমে এই লিফটগুলো স্থাপন করা হয়েছে। বারবার চলতে চলতে এগুলো অকেজো হয়েছে। এখন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। নিম্নমানের এই লিফট যেনতেনভাবে চালু করা হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও লিফটে দুর্ঘটনার নজির রয়েছে বলেই শঙ্কাটা বেশি।

যবিপ্রবির নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ১৪টি লিফটের মধ্যে এখন আটটি বন্ধ। যথাযথ মেইনটেন্যান্স ও পরিচালনা না করায় লিফটগুলো অচল অবস্থায় রয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী তিন বছর এগুলো প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা তা করেনি। তাদের বারবার বলা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

জানতে চাইলে লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মঈনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, লিফট সরবরাহের তিন কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বলেছি, বিল পরিশোধ করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লিফট চালু করে দেওয়া হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির (ইন্টারনাল পলিটিক্স) শিকার।

দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘনের ব্যাপারে মঈনুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো কমিটি রয়েছে। তারা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে মালামাল বুঝে নিয়েছে এবং তার স্থাপন করা হয়েছে। তারা কিন্তু সে সময় কোনো আপত্তি জানায়নি।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ সারাবাংলাকে বলেন, লিফটগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, লিফট চালু করে দেওয়ার পর উচ্চ আদালতের মাধ্যমে বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তারা বিষয়টি আমলে নিলেও পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

উপাচার্য আব্দুল মজিদ আরও বলেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি এক মাস হলো। কিন্তু লিফট নিয়ে এসব ঘটনা অনেক আগের। এখন সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/টিআর

যবিপ্রবি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) লিফট লিফটকাণ্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর