এই সরকার সারা বিশ্বের কাছে অবৈধ: ফরহাদ মজহার
১ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩১
ঢাকা: ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সারাবিশ্বের কাছে অবৈধ’ এমনটিই মন্তব্য করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক, তাত্ত্বিক ও জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির আহ্বায়ক ফরহাদ মজহার।
শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘দুর্নীতি ও রাষ্ট্রপতি বা সংস্কার’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড পিচ স্টাডিজ’ নামের একটি সংগঠন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই সরকার সারাবিশ্বে কিন্তু অবৈধ সরকার। দিল্লি আপনাদেরকে (অন্তর্বর্তী সরকার) আপাতত মেনে নিয়েছে। কিন্তু, যখনই তারা সুযোগ পাবে, তখনই বলবে যে, একটা অন্যায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জোর করে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যতই বলেন না কেন, আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে তিনি (শেখ হাসিনা) তো নির্বাচিত। ভারত অতি সহজে আরগু করতে পারে, এটা আমার সিকিউরিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১৭ কোটির বাংলাদেশে যদি নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়, সেটা আমার সিকিউরিটির জন্য হুমকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কি দিল্লির নেতৃত্বে আরেকটা ব্লু হেলমেট চান? আপনারা কি দিল্লির আগ্রাসন চান? চান কি-না? যদি না চান, তাহলে ইমিডিয়েটলি বলতে হবে, এই সংবিধানের অধীনে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার চাই না। এই সংবিধান আমাদের জন্য বিপজ্জনক। এই সংবিধান দিল্লির আগ্রাসন এবং ইন্দো-আমেরিকান-ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। সুতরাং অবিলম্বে এই সংবিধান বাতিল করে, সেনাবাহিনী সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা থেকে বের হয়ে এসে পরিপূর্ণ স্বাধীন সরকার হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। সেই সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন সহযোগিতা পরিপূর্ণভাবে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান শব্দটা সটিক নয়। এটা ঔপনিবেশিক শক্তিরা ব্যবহার করে। তারা যাদেরকে শাসন করবে তাদেরকে শাসন করার জন্য একটা আইন প্রণয়ন করে। এটাকে বলে সংবিধান। কনস্টিটিউশন শব্দের আভিধানিক অর্থটা হল গঠন। কনস্টিটিউশন শব্দের লিগ্যাল এবং পলিটিক্যাল অর্থ হচ্ছে ‘গঠনতন্ত্র’। সুতরাং সংবিধান শব্দটা বাতিল করতে হবে। এটার ব্যবহার শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। আমি একটা আইন তৈরি করব এবং সেই আইনে তোমাকে শাসন করব। তুমি শাসিত আমি শাসক। গণতন্ত্রে শাসিত এবং শাসক বলে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। গণতন্ত্রে জনগণই নিজের শাসক।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আইন এবং রাজনীতি আমরা বুঝি না বলে এবার কিন্তু গণঅভ্যুত্থানটা ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার কথা শুনে আপনারা আবার হতাশ হয়েন না। ব্যর্থ হওয়াটা জরুরি ছিল। আমরা যেন টের পাই, আমাদের অজ্ঞতা, আমাদেরকে পেছনে নিয়ে গেছে। যখন বঙ্গভবনে গিয়ে আপনি শপথ নিয়েছেন, তখনেই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। যদি শহিদ মিনার অথবা ‘রাজু’ তে শপথ নিতেন, যদি বলতে যারা প্রাণ দিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, তাদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি, শপথ গ্রহণ করছি, তাহলে গণঅভ্যুত্থান সফল হত। যখন বঙ্গভবনে গিয়ে সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছেন তখনই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই যে আমরা সংস্কার সংকার করছি। আমার তো বাড়িটাই নাই। এর সংস্কার কীভাবে হবে? আপনি কি সেভেনটিতে বাড়িটা বানিয়েছেন? সেভেনটিতে যাদের আপনি ভোট দিয়েছেন পাকিস্তানের আইন প্রণয়ন করার জন্য তারাই ফিরে এসে বলল যে, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন করব। ফলে তারা যেটা করার সেটা করেছে, সংবিধানে সমাজতন্ত্র ঢুকিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকিয়েছে। ওদের যে মতাদর্শ, যে মতাদর্শকে আমরা ফ্যাসিজম বলি। এটা আমরা মুসোলিনির কাছে শুনেছি।
তিনি আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী, সমাজতন্ত্র— এগুলো কিন্তু ফ্যাসিজমের মতাদর্শ। আমাদের যে চার নীতি, এতদিন যেটা দিয়ে আমাদের শাসন করা হয়েছে। আমাদের বোঝানো হয়েছে, এগুলো নাকি মুক্তিযুদ্ধে চেতনা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বৃহৎ একটা রাজনীতিক দল হিসেবে বিএনপির কাছে অনেক বেশি দায়িত্বশীল রাজনীতি আশা করি। আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না, তারা চুপ্পুকে কেন রাখতে চান? এটার কোনো সাংবিধানিক যুক্তি নাই, এটার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক নাই। কারণ, হল তথাকথিত ফ্যাসিস্ট সংবিধানের ভেতরে এটাকে (অন্তর্বর্তী সরকার) ঢোকানোটাই ছিল ভুল।’
তিনি আরও বলেন, ভুল থেকে বের হওয়ার জন্য প্রথমত চুপ্পুকে অপসারণ করা এবং একই সাথে ঘোষণা দেওয়া বা অধ্যাদেশ জারি করা। আমরা শুরুতে ভেছিলাম যে, সাংবাধিনাকিভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারব, আমরা ভেবেছিলাম কনস্টিটিউশনালি এ সমস্যার সমাধান করতে পারব। আমরা সকলেই ভুল করেছিলাম। রাষ্ট্রপতি বললেন, তার কাছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র নাই, তিনি আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আর একটা মুহূর্তে ওখানে তার থাকার অধিকার নাই। তাকে অপসারণ করতে হবে অবিলম্বে।’
এই যে সরকার, যেটা সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার টিকে আছে এখন পর্যন্ত আমাদের সেনা প্রধান সমর্থন করেছেন তাই। তিনি সমর্থন না করলে এই সরকার টিকে থাকতে পারতেন? তার শুভবুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে এটা দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এ সমর্থন চাই। সেনা সদস্যরা গুলি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল বলে এই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। এই সৈনিকদের অভিপ্রায়, যারা শ্রমিকদের সন্তান, কৃষকের সন্তান, তার অভিপ্রায়ের সঙ্গে আমাদের অভিপ্রায়ের কোনো পার্থক্য নাই।
সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড পিচ স্টাডিজের প্রধান নির্বাহী সাদেক রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এমপি