‘মরতে হয় মরে যাব, সমাবেশ আমরা করবই’
১ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৬
ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, আগামীকাল শনিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মরতে হয় মরে যাব। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাবেশ আমরা করবই।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করে জিএম কাদের বলেন, ‘আপনি এখন দেশের অভিবাবক। আপনার চোখে সবাইকে সমান দেখা দরকার। দুঃখ হয়, আপনার চোখ সবাইকে সমান দেখছে না। দেশে একটি চক্র যা খুশি তাই করছে। তাদের কারণে দেশ আজ অস্থিতিশীল। দয়া করে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করুন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতা দলীয়করণ ও বৈষম্যবিরোধী যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন করেছে তা সফল হয়নি। দেশর প্রতিটি স্তরে বৈষম্য ও দলীয়করণ চলছে। কোনো কিছুই দলীয়মুক্ত করতে পারেনি সরকার। বরং আগের তুলনায় বৈষম্য ও দলীয়করণ হচ্ছে বেশি। দেশ নিয়ে আজ আমরা শঙ্কায় আছি। দেশ আবার বৈষম্যের দিকে এগোচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। সে ব্যপারে আমরা অভিযোগ করেছি। বিচার পাব কি না জানি না। করেন দেশের আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না। হাজার হাজার মিথ্যা মামলা হচ্ছে। কে কার বিরুদ্ধে মামলা করছে। মামলার বাদীও আসামিদের চেনে না, জানে না।’
জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র ৯০ সালের পর প্রথম শুরু করে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে। ওই সময় তারা জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ দলের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরবর্তী সময়ে বিএনপির করা মামলার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করে। তখন থেকে কোথাও ন্যায় বিচার পাইনি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি জাতীয় পার্টিকে বার বার কবর দিয়েছে। সেই কবর থেকে উঠে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হয়ে টিকে রয়েছে।’
২০০১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নে জাতীয় পার্টিকে দুই দিক থেকেই চাপ প্রয়োগ করা হতো। সরকার যেমন নির্বাচনে যেতে চাপ দিত, তেমনি অন্যদিক থেকেও জোর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন থেকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হতো। নির্বাচনে না গেলে বা গেলে আমাকে এবং আমার পরিবারকে হত্যা করা হবে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমারা নির্বাচনে গিয়েছি, সরকারের মন্ত্রীও ছিলাম। কিন্তু সরকার আমাকে দিয়ে কোনো অনিয়ম করাতে পারেনি। জাতীয় পার্টি বিরোধীদলে থাকাবস্থায় সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছি। প্রতিদিন ছাত্রদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছি।’
জিএম কাদের আরও বলেন, ‘গতকাল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ছাত্র-জনতার নামে কিছু মানুষ এসে হামলার চেষ্টা করে। কর্মীরা তাদের প্রতিহত করে। পরে রাজু ভাস্কর্য থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নাম করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তারা নাগরিক কমিটির সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সমাবেশ ও সংগঠন করা সাংবিধানিক অধিকার। জাপা একটি নিবন্ধিত দল, আমরা সংগঠন করার অধিকারপ্রাপ্ত। আমরা সমাবেশের অনুমতি চাইলে ডিএমপি কমিশনার অনুমতি দিয়েছে। জাপা কখনও সন্ত্রাস করে না। আমরা সবসময় শান্তিরর পক্ষে। আমরা কখনো টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ও দলীয়করণ করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী আমাদের আওয়ামী লীগের দোসর বলে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। এই বক্তব্যের কোনো জাস্টিফিকেশন নেই। কারণ, আমরা গুরুত্ব দিইনি। এখন বড়সড়ভাবে এই প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।’
তথ্য ও ইতিহাস বিকৃতি করার চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘অবৈধ সরকার বললে ১৫ বছর বলা যাবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ছিল। অবৈধ বললে ১০ বছর বলতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে বৈধতা দিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশ নিয়েছে। আজ যারা বড় বড় কথা বলেন, অনেকে দেশ থেকে চলে গিয়েছিলেন।’
জিএম কাদের বলেন, ‘সরকার পতনের পর দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষ হচ্ছে দোষী, অপর পক্ষ নির্দোষ। কে দোষী, কে নির্দোষ তা নির্ধারণ করবে কে? এখানে আমরা রিপিটেশন দেখতে পাচ্ছি। তারা পবিত্র, আর সকলে অপবিত্র। তাদের চোখে দোষী মানুষের সংখ্যা বেশি।’
আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেকোনো লোক যেকোনো সময় এসে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে। আইনের শাসন অনুপস্থিত। আমরা আবার আগের চিত্র দেখতে পাচ্ছি।’
জিএম কাদের নাগরিক কমিটির উদ্দেশে বলেন, ‘হাতি যদি খাদে পড়ে চামচিকায়ও টোকা মারে। নাগরিক কমিটি বা ছাত্ররা জাপাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায়। ওদের দেশ পরিচালনার কী অভিজ্ঞতা আছে? জাপা রাজনীতিতে ও ভোট মাঠে সব দলের কাছে ফ্যাক্টর। আগামী নির্বাচনে জাপা ও আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলে জাপার ভোট তারা পাবে না। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ভাগ হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, আলমগীর শিকদার লোটন, গোলাম মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম