Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জনগণ ফুঁসে উঠলে সরকার রক্ষা পাবে না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৬

‘শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা’র উদ্বোধনী সমাবেশ। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, তিন মাস ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। জনগণ ফুঁসে উঠলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) পুরানা পল্টন মোড়ে ‘শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা’র উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশ থেকে প্রিন্স আগামী ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সিপিবির লাল পতাকা সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মনে কী আছে, জনগণ তা জানে না। কিন্তু এই সরকার ‘সংস্কার’ নামক চকলেট দেখিয়ে জনগণকে ভুলিয়ে রাখতে চায়। আমরা বলতে চাই— নির্বাচনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সংস্কার করুন। বাকি কী কী সংস্কার করতে হবে, লিখে রাখেন। নির্বাচিত সরকার সেগুলো সংস্কার করবে। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করে জনগণকে ধোঁকা দেবেন না। জনগণ অত বোকা নয়।

সরকারের সমালোচনা করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত তিন মাসে দৃশ্যমান কিছুই করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় যত টাকা পাচার হয়েছে তার একটি টাকাও দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে, কিন্তু দেশ পরিচালনা ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। যে লাউ সেই কদু।

সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের পক্ষে থাকবেন, যেন জনগণ আপনার বিরুদ্ধে না দাঁড়ায়।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কার্তিক চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখেন প্রিদিক সাহা, হযরত আলী, মুশফিকুল ইসলাম শিমুল, সেকান্দার হায়াৎসহ অন্যরা। সমাবেশ শেষে একটি পদযাত্রা পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় নেতাকর্মীরা জনগনের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে।

লিফলেটে সিপিবির পক্ষ থেকে কিছু দাবি উত্থাপন করে সেসব দাবির সঙ্গে সবাইকে একাত্ম হতে আহ্বান জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • শেখ হাসিনাসহ সব খুনিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে;
  • গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরি, আহতদের সুচিকিৎসা, নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে;
  • সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে;
  • কৃষিপণ্যের দাম কমাতে হবে। উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তুলতে হবে;
  • জনজীবনের নিরাপতা নিশ্চিত করতে হবে। দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে;
  • অবিলম্বে সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
  • ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মন্দির-মাজার ও নারীর ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে;
  • সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কালো টাকা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে;
  • বিদেশে পাচারের টাকা ফেরত আনতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে;
  • দুর্নীতি-লুটপাটে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে;
  • অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে বিদ্যুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হবে;
  • বিশেষ ক্ষমতা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সংবাদপত্র, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে;
  • জাতীয় নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন এবং শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে;
  • কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম দিতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। ক্ষেতমজুরদের সারা বছর কাজের ব্যবস্থা করতে হবে;
  • পাটকল, চিনিকলসহ সব বন্ধ কারখানা খুলে দিতে হবে;
  • বিদেশি সংস্থা ও কোম্পানির সঙ্গে সই করা দেশের স্বার্থবিরোধী সব অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে;
  • অবিলম্বে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে;
  • অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে; এবং
  • পতিত স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমপি/টিআর

রুহিন হোসেন প্রিন্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর