ঢাবিতে বিভিন্ন ব্যানারে পুনর্বাসিত হচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ!
১ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৮
ঢাকা: তিন মাস আগের কথা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি ছাত্রসংগঠনটি। এখন তো শুধু ক্যাম্পাসে নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দায়ে সম্প্রতি সারাদেশেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। ফলে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে দলটির নেতারা। কিন্তু কিছু নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের সমন্বয়ক, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ব্যানারে পুনর্বাসিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ইমদাদুল হক মিলন ও মেহেদী হাসান কবি জসীমউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই একসময় ছাত্রলীগ করতেন। এমনকি ছাত্রলীগের হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব ছিলেন। তাদের ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ছিলেন তারা। ১ম থেকে ৩য় বর্ষ পর্যন্ত এই দু’জন তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলেন। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রূপ বদলিয়ে পুরোদস্তুর ছাত্রদল।
হাজী মুহম্মদ মহসিন হল সূত্রে জানা গেছে, সাদ আল ইসলাম সাকিব। ছিলেন হাজী মুহম্মদ মহসিন হল ছাত্রলীগের সমাজসেবা উপসম্পাদক। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময়ও তাকে ছাত্রলীগের হয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। ১৫ জুলাইয়ে ছাত্রলীগের হামলার সময় তিনি ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেন বলে জানা গেছে। অথচ, ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে সাকিব এখন পুরোদস্তুর সমন্বয়ক। এমনকি বর্তমানে ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’র হয়ে কাজ করছেন বলে ফেসবুকে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আত্মপ্রকাশ করেছে। ছাত্রসংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ এক সময় ছাত্রলীগ করতেন বলে প্রমাণ মিলেছে। তিনি ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক পদে ছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে ফরহাদ ছাত্রলীগে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে জানান, তার অনুমতি না নিয়েই কমিটিতে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের পক্ষে কাজ করেছে তারা নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর সমর্থক। বর্তমানের তাদের কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কাজ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস সারাবাংলাকে, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর ছাত্রলীগের অনেকেই বোল পালটে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ নিজেকে দলের কর্মী হিসেবেও পরিচয় দিচ্ছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। সেজন্য আমরা সঠিক তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সদস্য ফরম পূরণের ব্যবস্থা করেছি। এর পর প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করছি। প্রয়োজনে ফরম পূরণ করা শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা এখন শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শত্রু নয়, পুরো জাতির শত্রু। তাই যে নকল বা ফেইক ব্যানারেই তারা ফেরত আসার চেষ্টা করুক না কেন, দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সন্ত্রাসবাদী হুঙ্কারকে ঠেকিয়ে দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।’
এছাড়া, ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততা নিয়ে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘যে সংগঠনটি বিগত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, আমাদের ওপর জুলুম করেছে, তাদের ছাত্রশিবিরে পুনর্বাসন করার প্রশ্নই আসে না। বরং তাদের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। আমরা ঢাবি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হোক। তাদের হাতে এখনো মানুষের রক্ত লেগে আছে।’
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম
ছাত্রদল ছাত্রলীগ ছাত্রশিবির পুনর্বাসন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন