দেরিতে হাসপাতালে আসায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর জটিলতা
২ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০০
ঢাকা: সাত বছর বয়সী আফসানা রিয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অষ্টম তলায়। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
তার বাবা জহিরুল ইসলাম মেয়ের অসুস্থায় প্রায় দিশেহারা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের কুনিয়া এলাকায় আমাদের বাসা। রিয়ার মা শামসুন্নাহারও ডেঙ্গু আক্রান্ত। ২৩ অক্টোবর রাত থেকেই মা-মেয়ে দু’জনেরই জ্বর আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে ২৫ অক্টোবর গাজীপুরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এনএস১ পরীক্ষা করানো হলে পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, মা শামসুন্নাহার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও রিয়ার ডেঙ্গু হয়নি। কিন্তু শারীরিকভাবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে রিয়া।’
তিনি বলেন, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি দু’জনেই থাকেন ঢাকার সবুজবাগে। যেহেতু আমি সারাদিন কাজের জন্য বাইরে থাকি তাই ২৫ অক্টোবরই স্ত্রী-সন্তানকে আমার শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। এর পর হঠাৎ করে রিয়ার দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়। এর পর ২৬ অক্টোবর মুগদা মেডিকেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য যায় তারা। সেখানে আবার এনএস-১ পরীক্ষা করানো হলে জানা যায় রিয়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত। তার প্লেটেলেট পাওয়া যায় ২৭ হাজার।
হাসপাতালটির ১১ তলায় আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্কদের। সেখানেই চিকিৎসাধীন ২১ বছর বয়সী ইয়াসমিন লিমার স্বামী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আরিফুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার (২৬ অক্টোবর) ডেঙ্গু আক্রান্ত ইয়াসমিন লিমাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে জ্বর এলেও ফার্মেমি থেকে ওষুধ নিয়ে বাসাতেই চিকিৎসা চলছিল লিমার। কিন্তু হঠাৎ করে ডায়রিয়া শুরু হওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন চিকিৎসকের কাছে গেলে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করাতে বলে।’
তিনি বলেন, ‘এনএস১ পরীক্ষা করানোর পরে জানা যায়, লিমা ডেঙ্গু আক্রান্ত। প্লেটেলেটও নেমে আসে ২১ হাজারে। তখনই চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়। হাসপাতালে ভর্তির পরে স্যালাইন শুরু করা হলে তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়া শুরু করে।’
সম্প্রতি সরেজমিনে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ডেঙ্গু ইউনিটের প্রায় প্রতিটি বেডেই রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিন সুস্থ হয়ে অনেকে বাসায় ফিরছেন। সেখানে আবার নতুন করে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। সেখানে থাকা একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিকে সাধারণ জ্বর ভেবে প্যারাসিটামল খেয়ে চিকিৎসা শুরু করে অনেকেই। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরে জানা যায়, তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত। এর পর তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকেই জ্বর আসার পরে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে নিজেরাই চিকিৎসা শুরু করে দেয়। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এই সময় ক্ষেপণের ফলে রোগীর পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকেই শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে দ্রুত।
মুগদা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সত্যজিত কুমার সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কম। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন যেসব ফ্লোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর পাশাপাশি ১২ তলাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মাঝে ২০ শতাংশ শিশু। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নানা কারণে দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসায় অনেকেরই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। অধিকাংশ রোগী জ্বর, শরীর ব্যথা বা মাথা ব্যথা, পেটের সমস্যা নিয়ে আসছেন। এছাড়া, উপসর্গ ছাড়াও কিছু রোগী আসছেন। সাধারণ উপসর্গের পাশাপাশি এবার ‘শক সিনড্রোম’ বেশি।”
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দুই হাজার ৭৮৭ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে ৩২ জন মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে দুই হাজার ৬৬৯ জন।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম