ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজ— ১০ নভেম্বর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠক
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৯
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে সরকার। ঢাবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট প্রধান অংশীজনদের নিয়ে আগামী রোববার (১০ নভেম্বর) জরুরি এ বৈঠক হতে পারে।
শনিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন গণমাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজ হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে এর আগেও তারা আন্দোলন করেছেন। গত কয়েকদিন ধরেও তারা এ দাবিতে রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের গত কয়েকদিনের আন্দোলনের পর গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে— কলেজগুলো ঢাবির অধিভুক্তই থাকবে। তবে তাদের দেখভালের জন্য ঢাবিতে সম্পূর্ণ আলাদা একটি ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। ঢাবি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একদিন পর আজ শনিবার এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেই ঢাবি কর্তৃপক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে গণমাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে, দুই উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ঢাবি কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ প্রস্তাব নিয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এর কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ মহলে আলাপ করেছে। সরকারও বিষয়টির জনগুরুত্ব বিবেচনা করে আন্তরিকতার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক হবে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাবি কর্তৃপক্ষ মনে করে, সরকারি সাত কলেজ ও ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের নিয়ে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ বিষয়ে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীসহ প্রধান অংশীজনদের নিয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে (সম্ভাব্য তারিখ আগামী রোববার, ১০ নভেম্বর) এ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে সরকার সম্মত হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংস্কার কমিটির স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন ও সংস্কার কমিটির কার্যক্রম চালু অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যক্রম যেন বাধাগ্রস্ত না হয়— এই তিন দাবিতে তারা আন্দোলন করছিলেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার ঢাবির ভিসি চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের অধিভুক্তি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাতিলের আলটিমেটাম দেন। বলেন, এই সময়ের মধ্যে অধিভুক্তি বাতিল না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝোলানো হবে।
সারাবাংলা/এআইএন/এসআর/টিআর