Saturday 02 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সর্বত্র সংস্কার প্রয়োজন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৭

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)‘র উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: পুঁজিবাজারে অনিয়ম, দুর্নীতি, আইপিও বাণিজ্য ও কারসাজির জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বিভিন্ন ষ্টেকহোল্ডারদের মাঝে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি‘র কমিশনে ৫ আগষ্টের পর পরিবর্তন আসলেও কমিশনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে এখনো সেখানে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কমিশন পরিচালনা করছে। এই অবস্থা থেকে কমিশনেও সংস্কার আনতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)‘র উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম। ক‍্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়াসহ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ‌্যমে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিকেরা। এছাড়াও আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসই সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী, সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, বিএমবিএর সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমানসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু জায়গায় আমাদের স্বচ্ছতারও অভাব আছে। আমরা স্বচ্ছতা ফেরাতেও কাজ করবো। পুঁজিবাজার ঠিক করতে সংস্কার প্রয়োজন। আমরা সেদিকেও নজর দেব।’

মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), ফান্ড ও বন্ড সম্পর্কিত কাজে কিছু সংস্কারের দরকার আছে। এ সংক্রান্ত সংস্কারে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করার চেষ্টা করবো।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। পুঁজিবাজার মুদ্রাবাজার অর্থনীতির সুন্দরতম সৃষ্টি। তবে আমরা আমাদের সৃষ্টিটাকে অসৃষ্টি তৈরি করে ফেলেছি। সেটা আমাদের সামগ্রিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকেরই একটা প্রতিচ্ছবি। দেশের মাঝে দুর্নীতি, বিচারহীনতা, অদক্ষতা এবং ভুল সিদ্ধান্ত সেই বিষয়গুলো পুঁজিবাজারে আছে। সেটারই ফলাফল আজকেই এই পরিস্থিতি।

বিজ্ঞাপন

ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক ছিল কেননা গত ১৫ বছররে আমরা নির্যাতিত বা নিগৃহিত। সাবেক এক অর্থমন্ত্রীর ফটকাবাজার ধারণা থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা বের হয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা বুঝতে হবে, পুঁজিবাজর অর্থনীতির ভিত্তি রচনা জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে সংস্কারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।

ক‍্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান কমিশন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর- এমন দাবি ও প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু বিএসইসিতে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলছে যাদের মধ‍্যে একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বরং ওইসব কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি কাজ করছেন।

ক‍্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সাবেক সভাপতি ও অর্থসূচক সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার সরকারের জন‌্য দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা না পারছে এটাকে বাদ দিতে, না পারছে ঠিক মতো অপারেট করতে। বাজারে যতো ধরনের কারসাজি হয় তার দায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের ওপর চাপানো হয়। অতীতে এই চর্চা প্রচুর হয়েছে।

প্রথম আলোর সাংবাদিক সুজয় মহাজন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি এমন সব জরিমানা করেছে যা আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আসলে কমিশনের আদায় করার ক্ষমতা আছে কিনা সেটাও একটা বিষয়।

যুগান্তরের সাংবাদিক মনির হোসেন বলেন, বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের স্বদিচ্ছার অভাব না থাকলেও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। যোগ্যতা না থাকায় কমিশন অনেক কাজই ঠিক মতো করতে পারছে না।

টিবিএসের বিশেষ প্রতিনিধি জেবুননেসা আলো বলেন, সোনালী পেপার যে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়েছিল তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। শুধু বাংলাদেশের শিক্ষার্থী নয় বিদেশের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্যও এটা একটা ভালো ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট হতে পারে। কিভাবে ব্যালান্স সিটটাকে ম্যানুপুলেট করে একেবারে ফেক ব্যালান্স সিট করা হলো। তখনকার কমিশনসহ সবাই জানতো কিন্তু কেউ কোন কথা বলে নি।

ফান্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র রিপোর্টার দৌলত আক্তার মালা বলেন, পুঁজিবাজারে ডাবল ট্যাক্সসেশন আছে এবং ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আছে। প্রতি বাজেটেই সারপ্রাইজ হিসাবে আসে ট্যাক্সটা, হটাৎ করেই বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন যে তাদের ওপরে ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। এক্ষেত্রে একটা ট্যাক্স বাউন্ড এক্সজেমশন দেওয়া চাই।

সারাবাংলা/জিএস/এমপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর