রমেক অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে সবাই একাট্টা
৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:১৩
রংপুর: রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) সদ্য নিয়োগ পাওয়া নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে চিকিৎসক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ। সবমিলিয়ে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কলেজ ক্যাম্পাস। অতিদ্রুতই অধ্যক্ষকে অপসারণ করা না হলে সর্বাত্মক কর্মবিরতী দেওয়ার মতো জোরেশোরে আন্দোলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আন্দোলনের সূত্রপাত:
গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা এক চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (সদ্য সাবেক) অধ্যাপক ডা. শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানকে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেনকে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়।
ডা. মাহফুজার রহমানকে রংপুর মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগদানের খবরে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী, ছাত্র-জনতা নামে একটি পক্ষ। পরদিন অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দরজার সামনে ব্যানার সাঁটিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
অধ্যক্ষের কক্ষে সাঁটানো ব্যানারে লেখা অভিযোগে বলা হয়, ‘শহীদ আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম বিকৃতির অপচেষ্টাকারী স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগী ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল মাহফুজার রহমানের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না।’
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়া মাহফুজার রহমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বিকৃতির অপচেষ্টা করেছেন। আওয়ামী আমলে কট্টর আওয়ামীপন্থি থাকায় উপাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আজীবন দোসর ও সুবিধাভোগী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত তাই তারা ডা. মাহফুজার রহমানকে তারা রমেকের ক্যাম্পাসে দেখতে চান না।
নতুন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম মণ্ডল, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদিলুর জামান, সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাধারণ ছাত্রের পাশে ছিলেন না। বরং আন্দোলনের কারণে তিনি সাধারণ ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর মাহফুজার রহমানকে রংপুর মেডিকেল কলেজে আমরা দেখতে চাই না। অবিলম্বে তাকে বদলি করা না হলে চিকিৎসক, কর্মচারী, শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।’
এদিকে সাবেক অধ্যক্ষ (সদ্য ওএসডি) শাহ মো. সরওয়ার জাহান নিজেকে রংপুর মেডিকেল কলেজে স্বপদে ফিরতে চান। তিনি বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আমার অধ্যক্ষ পদ পুণরায় ফিরে পেতে চাই।
অধ্যক্ষের সংবাদ সম্মেলন:
তবে যার বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ তিনি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২৯ অক্টোবর তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়। ৩০ অক্টোবর তিনি যোগদান করতে গেলে কতিপয় চিকিৎসক ও বহিরাগত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে বাধা দেয়।’
আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে মাহফুজার রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত করেছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক কিন্তু ময়নাতদন্তের সময় আমি যথেষ্ট সহযোগিতা করেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর যখন নিপীড়ন চলছিল, ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে বিরোধী পক্ষ ভেবে গত ৩০ জুলাই রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নির্দেশ জারি করে।’
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। বিগত সরকারের আমলে আমি উপাধ্যক্ষ ছিলাম। মন্ত্রণালয় আমাকে যোগ্য মনে করে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করেছে। আমাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার পর একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
আন্দোলনের সবশেষ পরিস্থিতি:
কলেজের নতুন অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের অপসারণের দাবিতে এখনো অনড় অবস্থানে আছেন আন্দোলনকারীরা। আজকেও (৩ নভেম্বর) ধারাবাহিক অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে আন্দোলনের অংশ হিসেবে এখনো তালা ঝুলছে অধ্যক্ষের কক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে হচ্ছে না কোনো ক্লাস। প্রশাসনিক দপ্তরগুলো খোলা থাকলেও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না আর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে।
কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পলক ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষের নিয়োগ বাতিল করে আবার নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে চিকিৎসকদের একটি পক্ষের আন্দোলন চলছে। এ কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই। তাই ক্লাসও হচ্ছে না।’
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ (৩ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘সচেতন রংপুরবাসী-শিক্ষার্থীরা’ নামে এক অংশ।
সারাবাংলা/এনজে