Sunday 11 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরের শুরু থেকেই ‘আনইউজুয়াল’ ডায়রিয়া রোগী


১০ জুন ২০১৮ ০৯:৪৮ | আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ১১:৪৪

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ২৪ বছরের নিলুফার সন্ধ্যা থেকেই পেটের পীড়ায় ভুগছিলেন, তবে রাত বাড়ার সঙ্গে যোগ হয় বমি। কোনোরকমে সে রাতেই (৬ জুন) সাড়ে তিনটার দিকে তাকে টঙ্গী থেকে নিয়ে আসা হয়  ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি)। সেখানেই চলছে তার চিকিৎসা। নিলুফার বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে। তবে হাসপাতালে আসার পর থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

পুরান ঢাকার জুরাইন থেকে এসেছেন ৬২ বছরের জাফরুল হোসেন। জানালেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গত ৫ জুন। আগের দিন (৪ জুন) ইফতারি করার পর থেকেই পেট ব্যথার সঙ্গে শুরু হয় বমি। কিছুক্ষণের ভেতরে এই হাসপাতালে নিয়ে আসার পর স্যালাইন চলছে, তাতে অবস্থার উন্নতি হয় তার।

গত বৃহস্পতিবার (৭ জুন) আইসিডিডিআর’বি ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এবারে শিশুর সংখ্যা অনেক কম, প্রাপ্ত বয়স্কের সংখ্যাই বেশি। সাধারণত ডায়রিয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। বছরের শুরু থেকে চিকিৎসকরা ‘আনইউজুয়াল’ ডায়রিয়ার রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

আইসিডিডিআর’বি এর রেজিস্ট্রার বুক থেকে জানা যায়, গত ৭ জুন দুপুর একটায় ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫৭ জন, ৬ জুন ৪৭৭ জন, ৫ জুন ৪৮৭ জন, ৪ জুন ৫০৫ জন, ৩ জুন ৫৫০ জন, ২ জুন ৪৬৬ জন, ১ জুন ৪৩৮ জন এবং গত ৩১ মে ছিল ৪৩২ জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, “বছরের এই সময়টাতে শিশুরা নয়, বড়রাই বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। মার্চ-এপ্রিলে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি পেলেও ‘আনইউজুয়ালি’ বছরের শুরু থেকেই এবারে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি পাচ্ছি।”

বিজ্ঞাপন

আইসিডিডিআরবির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. লুবাবা শাহরীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় সেটি অনেক বেশি হলেও গত এপ্রিল মাসে মাত্রাতিরিক্ত ডায়রিয়া হয়েছে। প্রায় ৬০০ এর উপরে রোগী প্রতিদিন থাকতো তখন। তবে গত কয়েকদিনে সে সংখ্যা কমে এসেছে। আবার যেকোনো সময়ে বেড়ে যেতে পারে।’

একইসঙ্গে, কিছুটা বৃষ্টি এবং রোজার জন্য বাইরের খাবার কম খাচ্ছে বলেও রোগীর সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ‘বিভিন্ন কারণের জন্য সংখ্যাটা ওঠানামা করছে। তবে অন্যান্য বছরে মে থেকে জুন পর্যন্ত যে পরিমান রোগী হয়, চলতি বছরে আমরা ইতোমধ্যেই তার দ্বিগুণ রোগী পেয়ে গেছি’, বলেন ডা. আযহারুল ইসলাম খান।

আইসিডিডিআরবির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. লুবাবা শাহরীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে মোট সাড়ে তিনশো রোগী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তখন বিকল্প ব্যবস্থা যেমন-ফোল্ডিং বেড কিংবা তাঁবু টানিয়ে বিছানার ব্যবস্থা করা হয়। অফিস স্পেসের ভেতরে ব্যবস্থা করা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না, গত মাসেও এ অবস্থা ছিল।’

ডা. লুবাবা শাহরীন আরও বলেন, ‘মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রি মনসুন সময়ে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক এবং এ সময়টাতে পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়, সংক্রমণটাও হয় বেশি। শুষ্ক মৌসুম হওয়াতে পানি বা খাবার বেশি খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও সে খাবার কতোটা ঝুঁকিমুক্ত সে বিষয়ে আমরা সচেতন নই। বেশির ভাগই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জীবাণুর জন্য এ সময় ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয় বেশি।’

তিনি জানান, ‘কলেরার জীবাণুর সংখ্যা এ সময় পানির মধ্যে বেড়ে যায়। যার কারণে পানির মধ্যে এ সময় ব্যাকটেরিয়ার ঘনত্ব বেশি হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই রোগাক্রান্ত হবার সংখ্যা বেড়ে যায়। আবার শীতের সময়টাতে শিশুর সংখ্যা বেশি থাকে। বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় শিশুরা। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে নিরাপদ পানি এবং ঘরে বানানো খাবার খেতে হবে। একইসঙ্গে ‘কমন হাইজিনের প্র্যাকটিস’ ভুললে চলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যেমন খাবার তৈরি করা, নিজে খাবার আগে এবং শিশুদের খাওয়ানোর আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে, বাথরুম ব্যবহারের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। আর রোজার মধ্যে বাইরের কেনা খাবার কম খেতে হবে। বাইরের শরবত না খেয়ে ঘরে বানানো শরবত খেলে শরীরের জন্য যেমন ভালো তেমনি ডায়রিয়ার আশঙ্কাও কম।’

রোজার ভেতরে বরফ একটি বড় ফ্যাক্টর মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু বরফ কোন পানি দিয়ে জমানো হচ্ছে সে ভাবনাটা আমরা ভাবি না। কিন্তু তাই বলে পরিমানে কম পানি যেন না খাই। তবে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয়, আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কিংবা যতোক্ষণ না পর্যন্ত হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব না হচ্ছে ততক্ষণ তাকে স্যালাইন খাওয়ানো।’

ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হলে রোগীকে দ্রুতই হাসপাতালে নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ ডায়রিয়া যেকোনো সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই বাসায় বসে থাকলে চলবে না। সময়ক্ষেপণ করার কোনও সুযোগ নেই।’

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর