ইরানে পোশাক খুলে প্রতিবাদ; তরুণীর মুক্তির দাবি অ্যামনেস্টির
৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:২১
ইরানে কঠোর পোশাকবিধির প্রতিবাদে পোষাক খুলে শুধু অন্তর্বাস পরে রাস্তায় হাঁটায় তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, শনিবার (২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাসিজ প্যারামিলিটারির সদস্যরা ওই তরুণীকে দেশটির বাধ্যতামূলক হিজাব আইন মেনে চলতে বাধ্য করেছিলো। তরুণীর পোষাক দেশটির নির্ধারিত পোষাক আইনের বিরুদ্ধ হওয়ায় তারা তার হিজাব এবং পোশাক ছিঁড়ে ফেলেন। পরে পোষাক খুলে শুধু অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসে হাঁটতে শুরু করেন তরুণী।
ধারণা করা হচ্ছে, কঠোর পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই তিনি এই কাজ করেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। গ্রেফতারের পর তরুণীর কোনো খোঁজ পাওয়া না যাওয়ায় দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তরুণীর শর্তহীন মুক্তির দাবি জানিয়ে ইরান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় যাতে তরুণীর ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন ও হয়রানি করা না হয়। সেই সাথে তাকে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার এবং আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ যেন নিশ্চিত করা হয়। সেইসঙ্গে, গ্রেফতারের সময় তার ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় এর নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি করেছে অ্যামনেস্টি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ইরান প্রতিনিধি মাই সাটো জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার ওপর নজর রাখছে এবং ইরান সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেটিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে যে, ওই তরুণীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা শুধু পোশাকবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এ সময় কোনো আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়নি।
তবে স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তরুণীকে গ্রেফতারের সময় নির্যাতন করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো এক ভিডিও তে দেখা গিয়েছে, সাদাপোষাকধারী কিছু লোক ওই তরুণীকে জোর করে গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
তরুণী পোষাক খুলে হাটা শুরু করলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভেবে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে তরুণীকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়াও হয়েছিল। কিন্তু পরে তাকে ইরান পুলিশ কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ১৯ বছরের মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে পোশাকবিধি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল, যেখানে নারীরা প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে এবং চুল কেটে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। পোশাকবিধি না মানায় মাশাকে আটক করেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তার পর হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। মাহশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হিজাব দিয়ে মাথার চুল পুরোপুরি ঢাকেননি। নতুন করে এই ঘটনার পর দেশটিতে আবারও বড় ধরনের প্রতিবাদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সারাবাংলা/এনজে