মেয়র শাহাদাতকে বরণের অপেক্ষায় ‘অভিভাবকহীন’ চসিক
৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৯ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৫১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শপথের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন আগামীকাল (মঙ্গলবার) দায়িত্ব নিচ্ছেন। নতুন নগরপিতাকে বরণের অপেক্ষায় প্রায় দুইমাস ধরে ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে থাকা নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদিও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার প্রশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন; কিন্তু একজন মেয়রের অভাব ঘুচতে যাচ্ছে শাহাদাতের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে।
নতুন মেয়রকে বরণে সবপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগর ভবন জুড়ে তৈরি হয়েছে অনেকটা উৎসবের আমেজ।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের প্রবেশ পথে চসিকের পক্ষ থেকে মেয়র শাহাদাত হোসেনকে স্বাগত জানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। এর আশেপাশে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। ভেতরে ঢুকতেই কার্যালয়ের ফটকের পাশে নতুন মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চসিকের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে টাঙানো হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার।
কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় চসিক মেয়রের রুম। রুমের পাশে ফলকে লেখা হয়েছে শাহাদাত হোসেনের নাম। রুমের মেঝেতে বিছানো হয়েছে নতুন ফ্লোরমেট। মেয়রের জন্য বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার। বার্নিশ করে আসবাবপত্রগুলো করা হয়েছে ঝকঝকে। টেবিলের ওপর নতুন কম্পিউটার শোভা পাচ্ছে। মেয়রের অনার বোর্ডেও যুক্ত করা হয়েছে শাহাদাত হোসেনের নাম। নতুন মেয়রের আগমন উপলক্ষ্যে পুরো নগর ভবনেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা গেছে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়রের রুমে নতুন করে একটি চেয়ার ও পিসি দেওয়া হয়েছে। কিছু হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করা হয়েছে। আসবাবপত্র বার্নিশ করা হয়েছে। এরপর উনি (মেয়র) এসে যেভাবে বলবেন সেভাবেই রুমের ভেতরে পরিবর্তন করা হবে। রুমের বাইরে নামফলকও চেঞ্জ করা হয়েছে।’
নতুন মেয়রকে গ্রহণ করতে সবাই উম্মুখ হয়ে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আমরা অভিভাবহীন ছিলাম। প্রশাসক থাকলেও তিনি ছিলেন অস্থায়ী। এখন আমরা স্থায়ীভাবে একজন অভিভাবক পাচ্ছি। উনি অনভিজ্ঞ ও গতানুগতিক রাজনীতিবিদ না। খুবই পরিচ্ছন্ন ও পেশাদার লোক। আশা করি উনার নেতৃত্বে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব।’
এর আগে, রোববার (৩ নভেম্বর) চসিকের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। এরপর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মাঝে একদিন পর মঙ্গলবার তিনি চট্টগ্রামে ফিরছেন।
চসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন ডা. শাহাদাত হোসেন। বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা দেবেন। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন।
এরপর সেখান থেকে নগরীর জেল রোডে অবস্থিত হযরত আমানত শাহ এবং হযরত বদর শাহ’র মাজার জেয়ারত করবেন মেয়র। সেখান থেকে তিনি নগরীর লালদিঘীর পাড়ের চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের গিয়ে সম্মেলন কক্ষে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
মতবিনিময় শেষে বিকেল ৫টায় মেয়র একইস্থানে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এরপর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অক্টোবরে শপথ নিলে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ হবে ১৬ মাস। যদি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিন মাস আগে তাকে পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ১৩ মাস।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয় জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারণ করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর মধ্যে, গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। আদালতের রায়ের সাতদিন পর গত ৮ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম